মাদকের বিরুদ্ধে কৃষ্ণপুরা গ্রামবাসীর আন্দোলন

প্রকাশিত


আগামী প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করতে সোনারগাঁ পৌরসভার কৃষ্ণপুরা গ্রামবাসী একাত্বতা প্রকাশ করে এক মতবিনিময় সভায় সামাজিক আন্দোলণ গড়ার ঘোষনা দিয়েছে। মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন পাশর্^বতী গ্রামের গুটিকয়েক মাদক ব্যবসায়ী কয়েকটি গ্রামের যুব সমাজকে বিপথে ধাবিত করছে। কৃষ্ণপুরা গ্রামের মিলন আব্দুল আউয়ালের নেতৃত্বে গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার দুজন মাদক ব্যবসায়ীকে মাদক সহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে গ্রামবাসী। ২ এপ্রিল মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ওরফে লুঙ্গি মিজান জামিনে ছাড়া পেয়ে ৩ এপ্রিল একটি ফেসবুক আইডি থেকে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় এবং যারা তাকে ও তার সহযোগীদের পুলিশে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তারই প্রতিবাদে কৃষ্ণপুরা পঞ্চায়েত কমিটি এ মাদক বিরোধী সভা করে।

পঞ্চায়েত কমিটি জানায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার দিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে লুঙ্গি মিজান (২৮) টিকটকের আড়ালে পৌরসভার কৃষ্ণপুরা সহ সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মাদক সেবন ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কৃষ্ণপুরা গ্রামের যুবসমাজের নজরে পড়ায় তারা গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক পাহাড়া বসিয়ে গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার এককেজি গাজাসহ মাদক ব্যবসায়ী লুঙ্গি মিজানের দুই সহযোগীকে গ্রামবাসী আটক করে । এ সময় লুঙ্গি মিজান কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে লুঙ্গি মিজান ও তার দুই সহযোগীকে আসামী করে জেলা আদালতে প্রেরণ করে। তারা আরো জানান, মাদকের সাথে লুঙ্গি মিজানের পুরো পরিবার যুক্ত। মাদক ব্যবসার টাকায় লুঙ্গি মিজান ছয়লাখ টাকার মোটর সাইকেল চালায় এবং মাদকের টাকায় নির্মান করছে আলিশান বাড়ি।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক পঙ্কজ দেবনাথ জানান, পৌরসভার দিয়াপাড়া মোহাম্মদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান লুঙ্গি মিজান নামে টিকটক আইডি খুলে টিকটকের আড়ালে মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে জানতে পারি। গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার কৃষ্ণপুরা গ্রামের যুবসমাজ মিজানের দুই সহযোগিকে ১ কেজি গাজা সহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

এ ব্যপারে কৃষ্ণপুরা গ্রামের মোতাহার মাসুম সিকদার বলেন, এ সমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমি আমৃত্যু মাদক সহ সমাজের যে কোন অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষনা করলাম। মাদক নির্মূল করতে হলে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। কারা মাদকের সাথে জড়িত প্রমানসহ পুলিশকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। তাহলেই মাদকমুক্ত করা সম্ভব। পুরো দেশের দায়িত্ব নয় আমরা আমাদের সমাজের দায়িত্ব নিলাম। এ গ্রামে লুঙ্গি মিজানের মতো মাদক ব্যবসায়ীদের অবাঞ্চিত ঘোষনা করলাম।

কৃষ্ণপুরা গ্রামের মামুন সিকদার বলেন, মাদক তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী লুঙ্গি মিজানকে আমাদের ছেলেরা মাদক সহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায়। সে আদালত থেকে জামিনে এসে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে যা খুবই দুঃখ জনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও অপপ্রচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।

গ্রামের শালিসকারক লিয়াকত হোসেন বলেন, আগে নিজের ঘরকে মাদক মুক্ত করে প্রতিটি ঘর থেকে মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যদি আমরা প্রত্যেকে নিজের পরিবারকে মাদকমুক্ত রাখতে পারি তাহলেই এ সমাজ মাদকমুক্ত হবে। এ সময় তিনি বলেন, মিলন কৃষ্ণপুরা গ্রামের যুবসমাজের আইকন। সে এই বয়সে মসজিদ, মাদরাসা ও কবরস্থানের উন্নয়ণ সহ যে কোন সামাজিক কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। সে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে যা খুবই ন্যাক্কারজনক।

মাদকবিরোধী সভা শেষে সবাই সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করতে শপথ গ্রহন করেন

আপনার মতামত জানান