দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত দিনাজপুরে

প্রকাশিত



দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত। এই জামাতে একসঙ্গে প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে দাবি আয়োজকদের। প্রখর রোদ আর তীব্র দাবদাহেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) উত্তরের ১৬ জেলাসহ সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার ও মাঠ গোর-এ শহীদ ময়দানে এবার ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন ফরিদপুর ও চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন মুসল্লি।


এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান ও ঈদগাহ মিনারটি। সাড়ে ২২ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। কিন্তু মাঝখানে করোনা পরিস্থিতির জন্য দুই বছর এই ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়নি ঈদের জামাত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ যাবৎকালের সর্বোচ্চসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতরের জামাত।



তীব্র গরম উপেক্ষা করে সকাল ৭টা থেকেই মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন এই ঈদগাহে। ঠিক ৯টায় শুরু হয় নামাজ। এখানে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহসহ প্রধানমন্ত্রীর জন্য শান্তি কামনা করে করা হয় মোনাজাত।

বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ, দিনাজপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নামাজের পূর্বমুহূর্তে এম ইনায়েতুর রহিম মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রমজানে আমরা যে তাকওয়া অর্জন করেছি, তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

নামাজ শেষে বৃহৎ এই জামাতের প্রধান উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, একসঙ্গে ছয় লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেছে এই জামাতে। সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

তিনি জানান, এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ এই জামাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ঈদগাহ মিনার ও ময়দানটি আরো সম্প্রসারণ করার জন্য দেশি-বিদেশি কনসালট্যান্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় মিনারগুলোর খবরা-খবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে পেরে খুশি মুসল্লিরা। তারা জানান, এবার ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা এসে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। গোর-এ শহীদ ময়দানে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হওয়ার পর থেকে এবার সর্বোচ্চ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা।

শুধু দিনাজপুর ও আশপাশের জেলা নয়, এই জামাতে নামাজ আদায় করতে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা। ঢাকা থেকে আগত মুসল্লি ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়ানুর ইসলাম (৪০) ও নীলফামারী জেলা থেকে এসেছিলেন কাউয়ুম হোসেন (৬৩) জানান, তারা এই জামাতের কথা শুনেছেন। এবার তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি।

তারা বলেন, এত বড় মাঠ ও এত মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে এটাই তাদের প্রথম নামাজ। এই অনুভূতি কাউকে বোঝানোর নয়। তারা এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে এবং ব্যবস্থাপনা দেখে খুব খুশি।

এখানে নামাজ আদায় করে একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন সাজয়পুরহাট থেকে আসা অলিম উদ্দিন (৫৫)।

তিনি বলেন, এশিয়ার বড় জামাতের কথা শুনে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছি। এটি আসলেই বৃহৎ জামাত। এই বড় জামাতে নামাজ আদায় করেছি বড় সওয়াবের আশায়। তবে দূরের মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন কিংবা বিশেষ কোনো পরিবহনব্যবস্থা করলে মুসল্লিরা এখানে সহজেই আসতে পারত।

বগুড়া থেকে আসা সাদেকুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারণে যানবাহন পেতে সমস্যা হয় দেখে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে নামাজ আদায় করতে আসেন না। যদি প্রতিটি জেলা থেকে বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে মুসল্লি আরো বেড়ে যাবে।

বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচাগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

আপনার মতামত জানান