ব্যাচ-৯৫ এর নৌ-ভ্রমণ, বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন

প্রকাশিত

পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমি অন্যদিক, সবাই বলে করছ ভুল আর তোরা বলিস ঠিক, তোরা ছিলি তোরা আছিস জানি তোরাই থাকবি, বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কী লাগে?’ গানের এই কলি দিয়েই শুরু করছি। আমাদের কাছে দুই অক্ষরের খুব ছোট একটা শব্দ বন্ধু। অথচ এর ব্যাপ্তি জীবন ভর। শব্দটা ছোট হলেও বন্ধুত্বের সজ্ঞা এত অল্প কথায় দেওয়া যায় না। বন্ধু মানেই সব আবেগকে ছাড়িয়ে যাওয়া। সুখ-দুঃখের সাথী, একে অপরের ছায়া সঙ্গী, ঝগড়া রাগ অভিমানে জড়িয়ে থাকা। আবার বিপদে বন্ধুর আস্থা ভরসা হওয়া। বন্ধুত্ব যে শুধু ছোটবেলায় গড়ে ওঠে তা নয়। জীবনে বেড়ে ওঠার পথে শৈশব, কৈশোর, ছাত্রজীবন, কর্মক্ষেত্র, সংসার ও সমাজ জীবনে নানা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং এই বন্ধুত্বকে উপযাপন করার জন্য ব্যাচ-৯৫ একটি বিশেষ দিন নির্ধারণ করে বেরিয়ে পড়ে উচ্ছাসের পথে। দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির জলকেলি ফিরিয়ে দেয় সেই ছোট্ট কৈশর।

আত্মার কাছাকাছি যে বাস করে, সেই প্রাণের ব্যাচ-৯৫ বন্ধুদের নিয়ে নবম নৌ-ভ্রমণ আনন্দ উল্লাস আর উচ্ছাসে কেটে গেল আরো একটি নতুন দিন। ব্যাচ-৯৫ এর মাঝে মিশে আছে যেন পৃথিবীর সব নির্ভরতা। ব্যাচ-৯৫ মানেই জীবনের সবুজতম সম্পর্ক।

‘বন্ধুত্ব’-তিন অক্ষরের এই শব্দটা আামাদের সবার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। নামের মাঝে যুক্তবর্ণগুলো যেন ভালোবাসার অটুট বন্ধনেরই প্রতিফলন। এই নামের সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক গল্প, আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়, উচ্ছ্বাস,সাহায্য -সহযোগিতা, ভরসা, মায়া, আর একরাশ ভালোবাসা। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্বের সাথে বিশ্বাস শব্দটিও ওতপ্রোতোভাবে জড়িত। বন্ধুর কাছেই একজন মানুষ তার সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে।

জীবনের প্রতিনিয়ত ব্যস্ততার ভিড়ে প্রিয় বন্ধুগুলোকে হয়তো বলা হয়ে ওঠে না, তোদের অনেক ভালোবাসি। কিন্তু বছরের এই একটি নৌ-ভ্রমণে আমরা ব্যাচ-৯৫ এর বন্ধুরা ভালোবাসার কথা, বিশ্বাস-ভরসার কথা একে-অপরকে প্রকাশ করে, সবাই মিলে হাসি-আনন্দে দিনটা উদযাপন করছি দীর্ঘদিন ধরে। বন্ধুত্বের টানে অনেক আত্মত্যাগের ঘটনা বরাবরই ঘটেছে। বন্ধু হলো রংধনুর রঙগুলোর মতো, যারা সবসময় কোনো না কোনোভাবে জীবনটাকে রঙিন করে রাখে। “বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু থাকলে পাশে আর কি লাগে, গানের এই লাইনটা আমরা সবাই জীবনের যে কোনো পদক্ষেপে উপলব্ধি করি। এই মায়ার বন্ধনগুলো যেন কোনো দিনও ছিন্ন না হয়। ভালোবাসার শক্ত গিঁটে অটুট থাকুক পৃথিবীর সব বন্ধুর বন্ধুত্বের বন্ধনগুলো।

বন্ধুত্ব কোনো সূত্রের মাপকাঠিতে মাপা যায় না। যে কথাগুলো গুরুজন বা পিতা-মাতাকে বলা যায় না। সে কথাগুলো আমরা প্রাণ খুলে বন্ধুর কাছে প্রকাশ করি। ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা, সুখ-দুঃখের কথা বন্ধুর কাছে নির্ভয়ে মন খুলে বলা যায়। বন্ধুত্বের বন্ধনে কোনো স্বার্থ থাকে না। বন্ধুত্ব যতই পুরাতন হয়, ততই দৃঢ় হয়। জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ বন্ধু খুঁজে নেয়। বন্ধু ছাড়া জীবন অসম্ভব।

‘বন্ধু’ শব্দটি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। যদিও আমরা ডিজিটাল যুগে দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই বন্ধুদের সময় দিতে পারি না অথবা বন্ধুদের খোঁজও নিতে পারি না। ডিজিটাল যুগে জীবনের সব চাহিদা পূরণের পরও যখন নিজেকে একা মনে হয়, তখন সবার আগে বন্ধুদের কথাই মনে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে ছোটবেলায় বন্ধু অনেক ক্ষেত্রেই দূরে চলে গেলেও থেকে যায় বন্ধুত্বের স্বাদ। দিন হোক বা রাত, ঝর হোক বা বৃষ্টি, সে বন্ধুর জন্য আসবেই।

বন্ধুত্ব হলো ঠিক এমনই একটা সম্পর্ক, যেখানে থাকে না রক্তের সম্পর্ক-স্বার্থের টান, থাকে আত্মার বন্ধন। কখনো কখনো সব সম্পর্ককে হার মানিয়ে যে সম্পর্কটি আমৃত্যু টিকে থাকে, সেই সম্পর্কের নামই বন্ধুত্ব। বিপদে-আপদে, মন খারাপে, কারণে-অকারণে, সুসময়-দুঃসময়ে নির্দ্বিধায় সবসময় পাশে পাওয়া যায় আমাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের। সেই বন্ধুদের নিয়ে বছরের একটা বিশেষ দিনই হলো আজকের ‘নৌ-ভ্রমণ’।


আড্ডা, ট্যুর, গল্প, ছবি তোলার মাধ্যমে পালিত হয় আমাদের নৌ-ভ্রমণ। বন্ধু মানেই ভালো কিছু।

 

গাজী মোবারক (ব্যাচ-৯৫), সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ

আপনার মতামত জানান