ফেসবুকে অনেক কবির জন্ম এবং অনেকের ইহধাম

প্রকাশিত

এস, এম আক্তারুজ্জামান 

ঢেউটিন দেখে হাত গোনা,
ফেসবুক থেকে হাল চেনা।

ফেসবুক সবচেয়ে বড় বই, সাহিত্য, দর্শন এবং বিনোদন।এটা সবচেয়ে বড় বাজার। এখানে প্রবেশ করলেই সব জানা যায়, দেখা যায়। এখানে আসলে কবিদের কবিতা অক্কা পায়, কবিতার পুনর্জন্ম হয়।

বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করে, বহু দেশ ঘুরে
অথবা
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া

রবিঠাকুরের মত এত আয়োজনের বা আফসোসের দরকার নেই পৃথিবীর এবং নিজের দেশের সৌন্দর্য দেখতে।শুধু ফেসবুকে চেক-ইন দিবেন আর সব দেখতে থাকবেন।

শীতের সকালে, জুনের দুপুরে
কনকনে শীতে, প্রখর গরমে
কম্বলের নীচে, উদোম শরীরে
ফেসবুক খুলে, সবকিছু মেলে।

ভার্সিটিতে পড়ার সময় বই মেলার সাথে ঘনিষ্ঠতা। এখন আর যাওয়া হয়না।তবে বন্ধুরা যায়, আমি বইমেলা দেখি বিছানায় শুয়ে বিনা ধুলাসেবনে। আহ কি মজা!

তবে, দুই দিন আগে জুনিয়র কলিগ ফেসবুক বন্ধু কবি Rahman Shelley,’র স্ট্যাটাস দেখে মন খারাপ হল। তিনি তার কবিতার উৎস প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় নিজের কবিতার বইয়ের কাটতি দেখতে যান। সেখানে গিয়ে উনি আফসোস করেন তবে রবি ঠাকুরের মত নয়। বই মেলায় বউ নিয়া মানুষ ঘোড়াফেরা, চেচামেচি করে; বই কিনে ১% নীরব পাঠক ৪৫কোটি টাকায়, আর চটপটি বা ফুচকা খায় বাকি সবাই কয়েকগুন বেশি টাকার। বইমেলায় কবিতার কবির সাথে সেল্ফি নয়, সেল্ফি তুলে পাগল দর্শক ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া নতুম আইটেম বয়/গার্লদের সাথে। প্রিয় ভাই আফসোস করবেন না। কবিতার বই তারা হয়তো তারা কিনেনা, বাট ফেসবুকে তারা কবিতা পড়ে।

কবিরা এখন কবিতা দুই জগতে লিখে, আগে ফেসবুকে এবং পড়ে কাগজে। কবিতা প্রমোট হয় ফেসবুকে। যার যত বেশি ফেসবুক বন্ধু এবং ফলোয়ার তার কবিতা তত বেশি পঠিত হয়। এখানে অনেক কবির জন্ম এবং অনেকের ইহধাম। আরেক কবি বন্ধু রুদ্র অহম প্রতিবাদে ফেটে পড়ছিলেন এই আফসোসে এবং প্রতিবাদে। পড়ে তিনি তা মুছে ফেলেন, তবে লিখে ফেলেন পেরিফেরাল বিদ্রোহী কবিতা।

ফেসবুক ৪র্থ জেনারেশন শিল্প বিপ্লবের মুল সিস্টেম হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। এর সাথে সবার উঠা-বসা, আলাপচারিতা। ফেসবুক জানে আমাদের কি অভাব, কি দাবি, কি খায়েশ।

শিক্ষায় জিপিএ-৫’র বন্যা বা প্রাচুর্য থাকলেও ফেসবুক বুঝে ফেলেছে আমাদের ইংরেজিতে দুর্বলতা অনেক। ফেসবুক পরীক্ষার খাতা চেক করে নাই তবে অনেকের ইংরেজি মন্তব্য বা স্ট্যাটাস দেখেন, সাংবাদিকের ইন্টারভিউ দেখেন। তাই, ইদানিং ফেসবুক ভিডিও আমাদের ইংরেজি শিখাচ্ছেন।

ফেসবুক বুঝতে পারল আমাদের গোপন দুর্বলতা আছে।সে জেনে গেছে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক কবির সাহেব জিনসেং পাউডার বিক্রি করে কোটি টাকা কামাচ্ছে বেহুদাই, হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্রেতারা। তাকে জেলে ঢুকিয়েও বিক্রি থামানো যাচ্ছেনা। তাই, এখন সবাই গোপন রোগের শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নিয়ে ফেসবুক ভিডিওতে হাজির। পয়সা খরচ করে ডাক্তার হবার বা ডাক্তার দেখানোর দরকার নাই, ফেসবুকে ইজি এবং মাগনা সমাধান।

বনলতা সেনকে দেখার বা অনুভব করার জন্য এতো শক্ত বা দুর্বোধ্য ভাষায় জীবনানন্দের কবিতা পড়ার দরকার নাই, ফেসবুকে আছে সমস্ত বনলতার সকল সৌন্দর্যের নিখুঁত ভিডিও রীল। শুধু ফেসবুক খুলবেন আর সবকিছু পেয়ে যাবেন। গোপন এবং প্রকাশ্য সব চাহিদার সমাধান ফেসবুক। ফেসবুকই গুনে দিবে আপনার ভাগ্য, মিটিয়ে দিবে আপনার চাহিদা।

অনেকেই হতাশ ফেসবুকের এই পান্ডিত্য এবং বাজার দেখে। হতাশ হবার কিছু নেই, ফেসবুকই হবে আগামির অর্থনীতি এবং সমাজ। আসুন, বেশি করে ফেসবুক করি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ৪র্থ ধাপে আনন্দে ভ্রমন করি।

 

লেখক

এস, এম আক্তারুজ্জামান 

ডিআইজি, বরিশাল রেঞ্জ

আপনার মতামত জানান