ফারিয়াকে নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুললেন সাবেক স্বামী

প্রকাশিত

ফেসবুকে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব, অতঃপর প্রেম। প্রেমের সম্পর্কের তিন বছর শেষে ২০১৮ সালে বেসরকারি চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর সঙ্গে আংটি বদল হয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার। এর পরের বছর ধুমধামে হয় তাঁদের বিয়ে। ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেই আয়োজনে উপস্থিত হন টিভি নাটকের বহু তারকা। বিয়ের ঠিক ১ বছর ৯ মাসের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে তাঁদের। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর সমঝোতায় তালাক দেন অপু-ফারিয়া। কারণ হিসেবে ফারিয়া তখন জানিয়েছিলেন, বনিবনা হচ্ছে না।

অবশেষে এক বছর পর ‘দেবী’ খ্যাত এই অভিনেত্রী জানালেন, শুধু বনিবনা নয়, সাবেক স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সরাসরি লিখেছেন এই তারকা। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন ফারিয়ার সাবেক স্বামী অপু। তিনি ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন। অপুর ভাষ্য, ‘প্রেম, বিয়ে কিংবা একটা সম্পর্ক—এর মাঝে হাজারটা চড়াই-উৎরাই থাকে। আবেগ, রাগ, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই একেকটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার বিয়ের সম্পর্কটি টেকেনি, এটা নিয়ে আমার বিপরীতের মানুষ অনেক বয়ান, স্ট্যাটাস, মতবাদ দিলেও এত দিন পর্যন্ত আমি কিছুই বলিনি। হয়তো আর বলবও না। ভেবেছি বোবার শত্রু নাই ! কিন্তু যা দেখছি অনেক দিন ধরেই, চুপ থেকে সম্মান দিয়ে যাওয়ায় আজকাল অনেকে সুযোগ নিয়ে নেয়।’

শবনম ফারিয়া ও সাবেক স্বামী অপু। ছবি: ফেসবুক অপু যোগ করেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার হিসাব অনেক সময়ই মেলে না, তাই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ারও একান্ত অনেক কারণ থাকে। কিছু কারণ একান্তই নিজস্ব, কিছু কারণ সামাজিক, আর্থিক বা বাইরের। মেজাজ গরম, ভালোমন্দ, উগ্রতা একটা সম্পর্কে দুজনের মধ্যেই থাকে। কষ্টের মুহূর্তও দুই দিকেই থাকে। খারাপ সময়ে কেউ একলা আসমানে তাকিয়ে থাকে না, দুজনই তাকায়। ব্যথা একদিকে হয় না, আলাদা হলে দুই দিকেই ব্যথা থাকে। তবু সব সময়ই চেয়েছি বিপরীতের মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সবার কাছে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থাপন করতে। অভিযোগের অনেক কথা থাকলেও আমার ক্ষেত্রে এক কথায় বললে, বনিবনা হয়নি অথবা সময়ের টানে নিজেদের নিজেরা হারিয়ে ফেলেছিলাম—এগুলো বলেই সবাইকে উত্তর দিয়ে আসছিলাম এত দিন। অভিযোগ দুই দিকেই থাকে, কেউই সন্ন্যাসী লেভেলে থাকি না আমরা। দিনের পর দিন কারো আসমান সমান অভিযোগ থাকলে, আরেক দিকে পাহাড় সমান থাকারই কথা। অভিযোগ পুঁজি করে নিজেকে সাধু সাজিয়ে ভিকটিম হিসেবে প্রকাশ করা অনেকের অভ্যাস হতে পারে, তবে এই পথে এখনো যেতে পারিনি।’

ফেসবুক শ্রদ্ধাশীলতা খুব বড় একটা পয়েন্ট আজকাল। একেকজনের পার্সপেক্টিভ থেকে যার যার কষ্ট বা দুঃখের আলাদা আলাদা ভার্সন থাকে। অপু-ফারিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘কেন ঘর ভাঙল, কেন আলাদা হলেন—এই প্রশ্নগুলো একান্তই নিজস্ব। উত্তর জেনে আপনাদের চটকদার নিউজ ছাড়া কিংবা কমেন্টে লাভ বা অ্যাংরি রিয়েকশনের বাইরে কেউই আসবে না। এই পার্সপেক্টিভ আলাদা হয়ে গেছে দেখেই হয়তো আমরা একভাবে আর চিন্তা করতে পারছিলাম না। তাই হয়তো আলাদা হওয়া। তবু ভাঙা আঙুলের গল্পটা রয়েই যায়, তাই তো? বরং ঘটনাটার শুরু কীভাবে, হলো কীভাবে, ভাঙল কীভাবে—এটা হয়তো জানার দরকার বিপরীত পাশ থেকেই। না হয় একদিক দোষী মনেই হয়! রাগের মাথায় উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গেলে হয়তো প্রতিটি কাপলেরই লিঙ্গ-নির্বিশেষে আজ ‘মি-টু’ স্ট্যাটাস দিতে হবে!’

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি যোগ করেন, ‘বলছিলাম শ্রদ্ধার কথা। পাশে থেকেও শ্রদ্ধা রাখা যায়, দূরে থেকেও। নিজেকে ভিকটিমের মতো উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিমূলক মতবাদ—আসলেই দুঃখজনক। যখন একটা মানুষকে জনসাধারণ অনুসরণ করে, তার দিক থেকে একটাই কথা মাথায় রাখা উচিত, With great power comes great responsibility. কেউ যদি সহজেই হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে, তারও উচিত সাবলীল ও সৃষ্টিশীল গঠনমূলক কথায় নিজের ইমেজকে বিকাশ করা। ইনফ্লুয়েঞ্জা আসলে যে কী—এটা হয়তো অনেকেই বুঝতে চান না! যাই হোক, গুজবের মতো একশ্রেণির মানুষ উহাই অনুসরণ করে যাবেন আর ইনবক্সে গালি দিয়ে যাবেন। কিন্তু যাচ্ছেতাই কমেন্ট বা স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেও রসিকতার পাত্র হয়ে লাভ নেই। আর অন্যকেও হাসির মাঝে ফেলে লাভ নাই। তবু নিজেকে প্রায়ই এটা বলেই সান্ত্বনা দিই যে, হয়তো বিপরীতের মানুষটি অশান্তিতে আছে দেখেই এমন মনোভাব পোষণ করছে। নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে নিজেই অশান্তিতে থাকলে তখন অনেকেই চেষ্টা করেন বাকি মানুষটাকেও ছোট প্রমাণ করতে। প্রায় সময়ই আমরা অশান্তিতে থাকলে নিজেদের বেসামাল করে কথা বলেই ফেলি। অন্য কেউ ভালো থাকলে আবার টেনে নামানোর চেষ্টাও হয়তো করেন কেউ।’

আপনার মতামত জানান