নাজাতের দশ দিন – রোজায় মুমিন পায় প্রশান্তি

প্রকাশিত

আজ আমরা ২৮ রোজা পালন করছি। সিয়াম সাধনার কঠোর সংযমের সিঁড়ি বেয়ে তাকওয়ার শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করাতে এসেছিল এ রমজান। আরবি তাকওয়া অর্থ বেঁচে থাকা, মুক্তি পাওয়া, নিরাপদ হওয়া। জীবনের প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টাকে তাকওয়া বলে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহর আজাব থেকে মুক্তি পেয়ে নিরাপদে জান্নাতে বসবাস করার জন্য যিনি চেষ্টা করেন তাকে বলে মুত্তাকি।

আল্লাহ বলছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের ওপর সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩।) সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন বিশ্বাসী বান্দা মুত্তাকির স্তরে উঠে যায়।

আপনি যখন রুহের জগতে প্রভুকে প্রভু বলে স্বীকার করেছেন, আবার এ জগতেও প্রভুর প্রভুত্ব মেনে নিয়েছেন তখন আপনি বিশ্বাসী হলেন। এখন আর আপনার নিজের ইচ্ছামতো চলার কোনো সুযোগ নেই। চলতে হবে প্রভুর ইচ্ছামতো। কিন্তু আপনার ভেতর যে নফস নামে আরেক ‘প্রভু’ আছে, আছে শয়তানি শক্তি, সে তো আপনাকে আল্লাহর ইচ্ছামতো চলতে দিচ্ছে না।

তখন আপনি হয়ে যান শয়তানের অনুসারী। নফসের গোলাম। শয়তানের অনুসারী থেকে, নফসের গোলাম থেকে একজন মানুষ কীভাবে আল্লাহর গোলাম হতে পারবে সে জন্য এক মাসের সিয়াম সাধনার ট্রেনিং দেওয়া হয় মোমিন বান্দাকে।

বান্দা যখন সিয়াম সাধনা শুরু করে, তখন নফস বলে, খুব পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি খেয়ে নাও। বান্দা বলে, সাবধান! সমুদ্রের গভীর অন্ধকারের নিচেও আল্লাহপাক স্পষ্ট দেখতে পান। তাই লুকিয়ে আড়ালে-আবডালে পানি খাওয়া সম্ভব নয়। এভাবেই শুরু হয়ে যায় তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।

নফস বলে, হারাম উপার্জন করো। বান্দা বলে, না। আল্লাহ দেখছেন। এমনিভাবে, এক মাসের বিশেষ কোর্স যখন বান্দা সফলভাবে শেষ করে, তখন তার চেতনায় গেঁথে যায়, আমি যাই করছি, আল্লাহপাক সব দেখছেন। এক মাসের ট্রেনিং শেষে বান্দা এমন রুহানি শক্তি অর্জন করে যে, তখন আর নফস তাকে পরাজিত করতে পারে না। নফসই তার কাছে পরাজিত হয়।

এ জন্যই এত দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহপাক বলেছেন, তোমাদের এবং পূর্ববর্তীদের ওপর সিয়াম ফরজ করে দিয়েছি, এতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারবে। মুত্তাকিরাই দুনিয়া আখিরাতের ফার্স্টক্লাস মানুষ। তাদের জন্য বিশেষ বিশেষ সুবিধা আল্লাহপাক রেখেছেন। এক. যারা মুত্তাকি হতে চায়, আল্লাহ তাদের মুত্তাকি হওয়ার কঠিন সাধনাকে সহজ করে দেন। তাদের জন্য এমন জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন, যা মানুষের কল্পনা করাও সম্ভব নয়। (সূরা তালাক, আয়াত : ২-৩।)

দুই. হে বিশ্বাসীরা! যদি তোমরা মুত্তাকি হও, তাহলে তোমাদের প্রজ্ঞা দান করা হবে। তোমরা বুঝতে পারবে দুনিয়া আখিরাতের জন্য কোনটি আসলেই ভালো আর কোনটি ভালো নয়। তোমাদের গোনাহগুলো মুছে দেব। ক্ষমার চাদরে তোমাদের জড়িয়ে নেব। (সূরা আনফাল, আয়াত : ২৯।) তিন. যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং মুত্তাকি হও, তাহলে দুনিয়া-আখিরাতে কেউই তোমাদের কোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২০।)

হে আল্লাহ, তাকওয়ার প্রশিক্ষণে সফল হওয়ার তাওফিক আমাদের দিন। আমাদের হৃদয়ে রোজার সুবাসিত ফুল ফুটিয়ে দিন। হে আল্লাহ, নাজাতের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তোমার কাছে ফরিয়াদ করছি। তুমি করোনার এ বোঝা আমাদের ওপর থেকে তুলে নাও। তুমি আমাদের ক্ষমা কর। আমিন।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ

আপনার মতামত জানান