ধর্মীয় আপস প্রস্তাবে যা বলেছেন মহানবী (সা.)

প্রকাশিত



বুদ্ধিবৃত্তিক ও অলৌকিক সব পন্থায় পরাজিত হয়ে কুরাইশ নেতারা এবার আপসমুখী পদ্ধতি গ্রহণ করল। ‘কিছু গ্রহণ ও কিছু বর্জন’-এর নীতিতে তারা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে আপস করতে চাইল। কোরআনের ভাষায়, ‘তারা চায় যদি তুমি কিছুটা শিথিল হও, তাহলে তারাও নমনীয়তা দেখাবে। ’ (সুরা কলম, আয়াত : ৯)

এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাবগুলো ছিল নিম্নরূপ : (ক) একদিন রাসুল (সা.) কাবায় তাওয়াফ করছিলেন।

এ অবস্থায় আসওয়াদ বিন আবদুল মুত্তালিব, অলিদ বিন মুগিরাহ, উমাইয়া বিন খালাফ, আম বিন ওয়ায়েল প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট নেতৃবর্গ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে আপস প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘হে মুহাম্মাদ, এসো আমরা ইবাদত করি তুমি যার ইবাদত করো এবং তুমি পূজা করো আমরা যার পূজা করি। আমরা এবং তুমি আমাদের কাজে পরস্পরে শরিক হই। অতঃপর তুমি যার ইবাদত করো, তিনি যদি উত্তম হন আমরা যাদের পূজা করি তাদের চাইতে, তাহলে আমরা তার ইবাদতে পুরাপুরি অংশ নেব। আর আমরা যাদের পূজা করি, তারা যদি উত্তম হয় তুমি যার ইবাদত করো তাঁর চাইতে, তাহলে তুমি তাদের পূজায় পুরাপুরি অংশ নেবে। ’ (ইবনু হিশাম ১/৩৬২; ইবনু জারির, কুরতুবি; ইবনে হিশাম ১/৩৬২)

ইবনু জারিরের বর্ণনায় এসেছে, ‘আমরা তোমাকে আমাদের সব কাজে শরিক করব। অতঃপর তুমি যে দ্বিন নিয়ে এসেছ, তা যদি আমাদের দ্বিনের চেয়ে উত্তম হয়, তাহলে আমরা সবাই তোমার সঙ্গে তাতে শরিক হবো। আর যদি আমাদেরটা উত্তম হয়, তাহলে তুমি আমাদের কাজে শরিক হবে এবং তাতে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করবে। ’ তখন এই সুরা নাজিল হয়।

(খ) মক্কার কুরাইশরা বলেছিল, যদি তুমি আমাদের কোনো একটি মূর্তিকে চুমু দাও, তাহলে আমরা তোমাকে সত্য বলে মেনে নেব।

(গ) তারা এ কথাও বলেছিল যে তুমি চাইলে আমরা তোমাকে এত সম্পদ দেব যে তুমি সেরা ধনী হবে। তুমি যাকে চাও, তার সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দেব। আর আমরা সবাই তোমার অনুসারী হবো। শুধু তুমি আমাদের দেব-দেবীদের গালি দেওয়া বন্ধ করো। যদি তাতেও তুমি রাজি না হও, তাহলে একটি প্রস্তাবে তুমি রাজি হও, যাতে আমাদের ও তোমার মঙ্গল আছে। (ঘ) মক্কার কুরাইশরা বলেছিল, তুমি আমাদের উপাস্য লাত-উজ্জার এক বছর পূজা করো এবং আমরা তোমার উপাস্যের এক বছর পূজা করব। এভাবে এক বছর এক বছর করে সর্বদা চলবে। তখন সুরা কাফিরুন নাজিল হয়। (কুরতুবি)

এবং তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘোষণা করা হয়। (আর-রাহিক, পৃষ্ঠা ৮৪-৮৫; তাফসির ইবন জারির, কুরতুবি, ইবন কাসির প্রভৃতি; ইবনু হিশাম : ১/৩৬২)

সুরা কাফিরুন নাজিলের কারণ হিসাবে বর্ণিত উপরোক্ত বিষয়গুলোর সূত্র যথার্থভাবে বিশুদ্ধ নয়। তবে এগুলোর প্রসিদ্ধি অতি ব্যাপক। যা ইবন জারির, কুরতুবি, ইবন কাসিরসহ প্রায় সব প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থে এসেছে। অতএব সূত্র দুর্বল হলেই ঘটনা সঠিক নয়, তা বলা যাবে না। কেননা সুরা কাফিরুনের বক্তব্যই ঘটনার যথার্থতা প্রতীয়মান হয়।

আপনার মতামত জানান