ডাকাত ছাড়াতে তদবির, উপজেলা চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছাড়া পেল যুবলীগ নেতা

প্রকাশিত



ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার টিপুরদী এলাকায় মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনে ডাকাতি করার সময় মঙ্গলবার ভোরে ৯ ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের কাছ থেকে ডাকাতিকাজে ব্যবহৃত ধারালো ছোড়া ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় তাদের ছাড়িয়ে নিতে ছুটে আসেন সোনারগাঁ পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক। ডাকাতদের ছাড়িয়ে নিতে ছুটে আসায় ঐ যুবলীগ নেতাকে প্রায় ৯ ঘন্টা পুলিশ হেফাজতে রাখার পর মুচলেকা দিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্য

গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্য



জানা যায়, মহাসড়কের সোনাখালী এলাকায় একটি গাড়ীতে ডাকাতি করে মুঠোফোন ও নগদ টাকা নিয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। বিষয়টি ওই ভুক্তভোগী মহাসড়কে টহলরত পুলিশকে জানালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে টিপুরদী এলাকা থেকে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তাকৃত ডাকাতদের ছাড়িয়ে নিতে ভোর রাতে ছুটে আসেন সোনারগাঁ পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ফায়জুল হাসান বাবু। পুলিশ ডাকাতদের ছাড়তে রাজী না হওয়ায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আইনি কাজে বাঁধা দেওয়া এবং ডাকাতদের ছাড়িয়ে নিতে তদবির করায় যুবলীগ নেতাকে সোনারগাঁ থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। ভোর তিনটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার পর সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া থানা থেকে নিজের জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এ সময় ঐ যুবলীগ নেতা থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে কাউসার, সোনাই মিয়ার ছেলে সোবেল মিয়া, জামাল মিয়ার ছেলে বিজয় মিয়া। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাপেরচর ও ঝাউচর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে শরীফ মিয়া, এনাতুল্লার ছেলে জসিম মিয়া। উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের প্রেমেরবাজার গ্রামের জয়নাল হকের ছেলে সানি মিয়া, মশুরাকান্দা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে জুয়েল, নীলকান্দা নাজিরপুর গ্রামের ইসমাইলের ছেলে ইসলাম ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামের হযরত আলীর ছেলে রকি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ফায়জুল হাসান বাবু বলেন, ভুল বুঝাবুঝির কারনে এমন ঘটনা ঘটেছে। ভোরে আমার পরিচিত এক ভাতিজা আমাকে ফোন দিয়ে জানান তাকে বিনা কারনে পুলিশ হয়রানি করছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি ডাকাতির কারনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে থানা পুলিশ আমাকে প্রায় ৯ ঘন্টা থানা হেফাজতে রাখলেও পরে যখন দেখেছে আমি নির্দোষ তখন আমাকে তারা ছেড়ে দিয়েছে।

সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, থানা পুলিশ তদন্ত করে যখন বুঝতে পেরেছে বাবু নির্দোষ তখন আমাকে ফোন করলে আমি তাকে আমার জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়ে আসি।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরে এ ঘটনার বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আমি দলমত বুঝি না সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যদি কেউ অপরাধী প্রমানিত হয় কিংবা কোন না কোনভাবে অপরাধের সাথে জড়িত থাকে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, ডাকাতদের ছাড়াতে তদবির করায় ফায়জুল হাসান নামের একজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কোনদিন কোন অপরাধীদের পক্ষে তদবির না করা শর্তে মুচলেখা রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আপনার মতামত জানান