কোরবানির বদলে অর্থমূল্য দেওয়া যাবে?

প্রকাশিত

কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হলে যেকোনো উপায়ে তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। মহামারি কিংবা দুর্যোগের কারণে কোরবানি করা থেকে বিরত থাকা যাবে না।

সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি : এমনকি মহামারি, দুর্যোগ ইত্যাদির অজুহাতে কোরবানি না করে সে টাকা দান করলেও কোরবানি আদায় হবে না। সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। সামর্থ্যের পরও কেউ কোরবানি না করলে হাদিসে তার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্যের পরও কোরবানি দেয় না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির দিনগুলোতে (জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) কোরবানির চেয়ে বেশি পছন্দনের কোনো আমল নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব : কোরবানির দিনগুলোতে বুদ্ধিমান, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম ও নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শর্তানুসারে পশু জবাই করা ওয়াজিব। নির্ধারিত দিনে সামর্থ্যবান হওয়ার পরও কোরবানি না দিয়ে বিকল্প হিসেবে এর মূল্য দান করলে কোরবানি আদায় হবে না।

অতএব কোরবানির বদলে দান-সদকা যথেষ্ট নয়; বরং নির্ধারিত ব্যক্তির ওপর কোরবানিই করতে হবে। পক্ষান্তরে নিজ শহর ও রাজ্যে পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলে, অন্য কোনো স্থানে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পশু কোরবানির ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।

কঠিন সময়ে কোরবানির বিধান : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। ওই বছরও তিনি কোরবানি না করে দান-সদকা করতে বলেননি; বরং ওই বছর কোরবানি করে গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করতে নিষেধ করেছিলেন। যদিও পরের বছর দুর্ভিক্ষ না থাকায় সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৬৯, মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৪)

কোরবানির অর্থদানের বিধান : আর কোরবানির সঙ্গে প্রাণ বিসর্জনের সম্পর্ক আছে, এটি অর্থের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কোরবানি পৃথক ইবাদত, আর দান-সদকা পৃথক ইবাদত। একটি অন্যটির পরিপূরক নয়। তবে কেউ যদি মহামারি কিংবা দুর্যোগে আক্রান্ত অসহায় মানুষদের দান করতে চায়, তারা তাদের নিজেদের কোরবানির পশু জবাই করে গোশতগুলো অসহায় মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দিতে পারে। অথবা কোরবানির জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট থাকলে সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে তাও অসহায়দের দান করতে পারে। কিন্তু কোরবানি বাদ দিয়ে সে টাকা অসহায়দের দান করে দেওয়ার সুযোগ নেই।

কোরবানি না দিলে করণীয় : কেউ কোরবানি করার পূর্ণ চেষ্টা করার পরও যদি নিজে বা কারো মাধ্যমে কোরবানি করতে সক্ষম না হয় এবং কোরবানির দিনগুলোও অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য দুটি করণীয় আছে—

এক. আগে থেকে পশু ক্রয় করা থাকলে তা জীবিত সদকা করতে হবে। তা একজন বা একাধিক ব্যক্তি ক্রয় করুক।

দুই. পশু ক্রয় করা না থাকলে মধ্যম পর্যায়ের একটি ছাগলের মূল্য বা বড় পশুর এক সপ্তমাংশের মূল্য সদকা করতে হবে।

মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে নিরাপদে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান