ঋণমুক্ত জীবন কল্যাণ বয়ে আনে

প্রকাশিত

পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা ইসলামী সমাজব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্য। সাহায্য-সহযোগিতার নানা ধরন ও উপায়ের মধ্যে অভাবগ্রস্থকে বিনা সুদে ঋণ প্রদান অন্যতম সদকা হিসেবে বিবেচিত। তবে ঋণ প্রদান করা ভালো হলেও ঋণ গ্রহণ করা ভালো কিছু নয়। তাই ইসলামে ঋণ প্রদানে উৎসাহ দিলেও ঋণী হতে নিরুৎসাহী করা হয়েছে।

অপরিশোধিত ঋণ ক্ষমা হয় না : ঋণদাতা ক্ষমা না করলে অপরিশোধিত ঋণ কখনো ক্ষমা হয় না। দুনিয়াতে পরিশোধ না করলে পরকালে আমল দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। আমল না থাকলে ঋণদাতার পাপ নিজের কাঁধে নিয়ে হলেও ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদের সব পাপ ক্ষমা করা হলেও অপরিশোধিত ঋণ ক্ষমা করা হয় না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঋণ ছাড়া শহীদের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৯৯১)

ঋণ জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয় : ঋণগ্রহণ অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। ঋণ নিয়ে ভিটে-মাটি হারানোর ঘটনাও রয়েছে। এ জন্য হাদিসে ঋণের মাধ্যমে জীবনকে সংকটাপন্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের নিরাপদ জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ো না। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, সেটা কিভাবে? তিনি বলেন, ঋণ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭৩২০)

ঋণ মানুষকে মিথ্যুক ও প্রতারক বানায় : ঋণ নিয়ে যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারলে অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে এত বেশি কেন আশ্রয় চান? নবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন ঋণী হয়, তখন কথা বললে মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৯৮; মুসলিম, হাদিস : ১৩৫৩)

ঋণগ্রস্থের জানাজা না পড়ানো : নবী (সা.) ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত জানাজার নামাজ পড়াতে চাননি। সালামা ইবন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কাছে একটি জানাজা আনা হলো, যেন তিনি জানাজার নামাজ পড়ান। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মৃত ব্যক্তির কি কোনো ঋণ আছে?’ তারা বলল, কোনো ঋণ নেই। তিনি নামাজ পড়ালেন। এরপর অন্য একটি জানাজা আনা হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মৃত ব্যক্তির কি কোনো ঋণ আছে?’ তারা বলল, হ্যাঁ, আছে। তিনি বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জানাজার নামাজ আদায় করো।’ আবু কাতাদা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমি গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি তার জানাজার নামাজ পড়ালেন। (বুখারি, হাদিস : ২১৭৩)

ঋণ থেকে বাঁচতে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া : ঋণ গ্রহণ করার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া এবং ঋণ থেকে বাঁচতে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া জরুরি। এই মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি ওয়াল ‘আজঝি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবুনি ওয়াল বুখলি ওয়া দালাইদ-দাইনি ওয়া গলাবাতির রিজাল’। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুঃখ, দুশ্চিন্তা, অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কার্পণ্য, ঋণের বোঝা এবং মানুষের প্রাবল্য থেকে আশ্রয় চাই। (বুখারি, হাদিস : ৬০০৮)

ঋণমুক্ত থাকা জান্নাতে প্রবেশে সহায়ক : ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে এবং মৃত্যুর পরও তা পরিশোধ করার ব্যবস্থা না হলে নিঃসন্দেহে তা পরকালীন জীবনের সফলতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ঋণমুক্ত থাকা জান্নাতে প্রবেশে সহায়ক হয়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার রুহ এবং শরীর তিন জিনিস থেকে মুক্ত অবস্থায় পৃথক হয় অর্থাৎ মৃতবরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিন জিনিস হলো, অহংকার, সম্পদ আত্মসাৎ এবং ঋণ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৭৩)

ঋণ পরিশোধের সদিচ্ছা, প্রচেষ্টা ও মহান আল্লাহর কাছে দোয়া অব্যাহত থাকলে আল্লাহর সাহায্যে ঋণমুক্ত হওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান