ইবাদতের বসন্ত

রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছিল মহাগ্রন্থ আল কোরআন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শোকর করো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
শুধু তা-ই নয়, মহান আল্লাহ এ মাসের রোজাকে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভের মর্যাদা দিয়েছেন। ইবনে উমার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচটি ভিত্তির ওপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত, (১) এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, (২) নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, (৩) জাকাত প্রদান করা, (৪) রমজানের রোজা রাখা ও (৫) বাইতুল্লাহর হজ সম্পাদন করা। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৯)
মহান আল্লাহ মহিমান্বিত এ মাসের সম্মানার্থে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেন আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। শয়তান ও দুষ্ট জিনদের বন্দি করে ফেলেন। এ মাসের প্রতিটি রাতে মহান আল্লাহ অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দিয়ে দেন। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শয়তান ও দুষ্ট জিনদের রমজান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী, অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত, বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
ইবনে খুজাইমা নামক হাদিস গ্রন্থের একটি হাদিসের তথ্যমতে, এ মাসের একটি নফল ইবাদতের (সওয়াবের দিক থেকে) অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। (ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১৮৮৭)
আর রোজার বিনিময় তো মহান আল্লাহ নিজ হাতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর মর্জি হলে আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকাজের প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল্লাহ বলেন, তবে রোজা ছাড়া, তা আমার জন্যই (রাখা হয়) এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। সে তার প্রবৃত্তি ও পানাহার আমার জন্যই ত্যাগ করে। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ : একটি আনন্দ তার ইফতারের সময় এবং আরেকটি আনন্দ রয়েছে তার প্রভু আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরীর ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৩৮)
আর যাদের সামর্থ্য আছে, তারা রমজান মাসে ওমরাহ পালনের মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব পেতে পারে। কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, …নবী (সা.) বলেন, রমজান মাসে একটি ওমরাহ আদায় করা একটি ফরজ হজ আদায় করার সমান অথবা বলেছেন, আমার সঙ্গে একটি হজ আদায় করার সমান। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৩)
সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ সবাইকে ইবাদতের এই বসন্তের পরিপূর্ণ ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন
আপনার মতামত জানান