ইউএনও’র বিরুদ্ধে ৩০ মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ

প্রকাশিত

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন-এর অশালীন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করারও অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় দ্রুত ইউএনও’র অপসারণের দাবিতে, গত বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) উপজেলার ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্রের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আলপনা ইয়াসমিন গত বছরের (২০২১) ৪ জানুয়ারিতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই অশালীন কথাবার্তা, অন্যায় আবদার ও আচরণ করে যাচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানজনকভাবে নাম ধরে ডাকা, সরকারি ত্রাণের কম্বল দেওয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করাসহ বিভিন্ন অশালীন আচরণ করেন তিনি। যে কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া শিক্ষকসহ গণ্যমান্যদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী সদর ইউনিয়ন এর সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, গাবনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জসমত আলী বলেন, ‘আলপনা ইয়াসমিন উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের কিছুদিন পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল সেবাগ্রহীতাদের প্রতি একটা বিরূপ আচরণ করে আসছেন। তার কাছে আমরা কোনো কাজে গেলে গুরুত্ব দেন না। এমনকি বসার জন্য কোন স্থানও দেন না। সরকার ও দেশের জনগণ আমাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, আমাদের শ্রদ্ধা করেন। সরকারি কর্মকর্তাদের আমাদের প্রতি গুরুত্ব ও সম্মান দিতে বলা হয়েছে। আমাদের বয়স হয়েছে, আর কয়দিনই বা বাঁচবো। ইউএনও আমাদের সন্তানের বয়সী। আমাদের সঙ্গে তার এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তার এমন আচরণে মর্মাহত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোপূর্বে যেসব ইউএনও দায়িত্ব পালন করে গেছেন, তারা আমাদের পরামর্শ নিয়েছেন ও সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু আলপনা ইয়াসমিন একমাত্র ইউএনও যিনি আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন। যার কারণে বাধ্য হয়ে অভিযোগপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠিয়েছি। আমরা দ্রুত তার অপরাসারণ চাই। নইলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

বদলগাছী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার ডিএম এনামুল হক বলেন, ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করেন না। আমাদের সম্মানের সঙ্গে না ডেকে নাম ধরে ডাকেন। যা আমাদের কাছে অসম্মানজনক বলে মনে হয়। এমনকি কোনো পরামর্শের জন্য গেলে সহযোগিতা না করে অসম্মানজনক কথা বলেন। শিক্ষক ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করেন না। ইতোপূর্বে এসব বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি নিজেকে সংশোধন করেননি। অবশেষে তার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ডাক যোগে অভিযোগ পাঠিয়েছি। আমরা তার দ্রুত অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের সঙ্গেই যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সাধারণ সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে একবার ভাবুন!’

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম দেওয়ান বলেন, উপজেলায় ভাতাভোগী প্রায় ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা আছে। অনেক অসহায় ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাও আছে। আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ত্রাণের কম্বলের জন্য বেশ কয়েক দিন আগে ইউএনও’র কাছে গিয়ে আবদার করেছিলাম। যেদিন কম্বল বিতরণ করা হচ্ছিল সেখানে তিনি উপস্থিত থেকে বিতরণ করছিলেন। এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে তদন্ত করে কম্বল দিবেন বলে জানিয়েছিলেন। সে সময় তার কথায় আমরা মনোক্ষুন্ন হয়ে সেখান থেকে লজ্জায় ফিরে আসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আসলে কি বলবো! তিনিও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আমিও কর্মচারী। তিনি বড় পদে চাকরি করেন আর আমি ছোট পদে। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ইউএনও সাহেবের অফিসে দেখা করতে যাই। সে সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। জেলা শহরে একটি গানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ায় আমাকে ধমক দিয়ে অশালীন ব্যবহার করে তার অফিস থেকে বের করে দেন। আমি যে গানের অনুষ্ঠানে যাবো সেখানে যাওয়ার জন্য তো আমাকে বলা হয়নি বা দাওয়াত করা হয়নি। আমি একজন শিক্ষক মানুষ। এ ভাবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সামনে অপমান করা আসলে কতটা যৌক্তিক?’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেছে কি-না তা আমার জানা নেই। তবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।’

আপনার মতামত জানান