আড়ংয়ের ‘চেঞ্জরুমে’ নারীদের ভিডিও ধারন! ব্লাকমেইলের চেস্টা, যুবক আটক

প্রকাশিত

সিরাজুল ইসলাম সজীব। বয়স ২২। বাবা মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সী। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদে। সে আড়ংয়ে আড়ংয়ের বনানী শাখার চাকরি করতো। চাকরিরত অবস্থায় সে চতুর্থ তলার কর্মচারী চেঞ্জ রুমের বাইরের সানসেট-এ দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে আড়ংয়ের নারী কর্মচারীদের অজান্তে তাদের নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার সময় ভিডিও ধারণ করতো।

আড়ংয়ের নারীকর্মীদের চেঞ্জ রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় ১৩ জন নারী কর্মীর একটি দুটি নয়, ১২০টি ভিডিও ধারন করেছিল। যাদের ভিডিও করা হয়েছে, তাদের কাছে সেই ভিডিও পাঠাতো ফেসবুকের মেসেঞ্জারে। কখনও অর্থ দাবি কখনও বিকৃত চাহিদার কথা জানাতো তাদের। আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারীকে তার ভিডিও পাঠিয়ে শরীর দেখার অনৈতিক দাবী করেছিল। অন্যথায় ফেসবুকে ভিডিও ভাইরালের হুমকি। নিজের সততায় বিশ্বাসী কর্মঠ ওই সাহসী নারী ভয় পেয়ে দমে যাননি। বিষয়টি ‘আড়ংয়ের একজন অফিসারকে জানালে তিনি সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ওই তরুণকে গ্রেফতার করেছে। তাই সজীবের শেষ রক্ষা হয়নি। তার কাছ থেকে ভিডিওগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আড়ংয়ের ওই নারীকর্মীর ভিডিও করা এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা (নম্বর ৩৫) দায়ের করেন। এসআই ফারুক হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আড়ংয়ের একজন অফিসারের দেওয়া তথ্য মতেই আমরা সজীবকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করি। সজীবকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারী ১৬ জানুয়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৯৫৫) করেন। ওই জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সিরাজুল ইসলাম সজীব তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে সীমান্ত সৈকত নামে আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলে। ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে। এসময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে এবং তার কথামতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব জানিয়েছে, তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক নারীকর্মীর ভিডিও করার অভিযোগে ডিসেম্বর মাসে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তার কাছে আগের করা সব ভিডিও সংরক্ষিত ছিল। তাকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তার কাছ থেকে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম জানান, আড়ং যৌন হয়রানিমূলক যেকোনও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সর্বদা কঠোর অবস্থানে থাকে। বনানী আউটলেটের সাবেক বিক্রয় প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একজন সহকর্মীর যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

আপনার মতামত জানান