আজ বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৫তম জন্মদিন
বসন্ত বাতাসে, বন্দে মায়া লাগাইছে, আমি কুলহারা কলঙ্কিনী, গাড়ি চলে না চলে না’, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতামসহ অসংখ্য কালজয়ী গানের রচিয়াতা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৫তম জন্মদিন আজ (শনিবার)।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
কিংবদন্তিতুল্য এই বাউল গানে-গানে অর্ধশতাব্দীরও বেশি লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের দ্বারা নানা লাঞ্ছনারও শিকার হয়েছিলেন এই বাউল।
ভাটির জল-হাওয়া-মাটির গন্ধ, কালনী-তীরবর্তী জনজীবন,মানুষের চিরায়ত সুখ-দুঃখ, দারিদ্র্য-বঞ্চনা, লোকাচার প্রভৃতি তার গানে উঠে এসেছে। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের পাশাপাশি ভাটিয়ালি গানেও দখল ছিল তার।
তিনি ১৬০০-এর বেশি গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। শাহ আবদুল করিমের লেখা ৬টি গানের বই রয়েছে। এগুলো হলো,আফতাব সঙ্গীত,গণসঙ্গীত,ধলমেলা,কালনীর ঢেউ,ভাটির চিঠি ও কালনীর কূলে’।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি এই লোকশিল্পীর জন্মদিন এলেই ভাটি অঞ্চলের গ্রামীণ বাউলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা ভিড় জমান উজানধল গ্রামে।
তিনি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় গণসংগীত গেয়ে লাখ লাখ তরুণকে উজ্জীবিত করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদকও।
প্রতি বছরের মতো এবারও গণমানুষের প্রিয় এ বাউলের জন্মবার্ষিকী ঘিরে তার ভক্তরা সমবেত হচ্ছেন উজানধলের গ্রামের বাড়িতে রয়েছে নানা আয়োজনসহ আগামী ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি দুদিনব্যাপী লোকউৎসব। জেলার বিভিন্ন এলাকার বাউল ভক্তরাও নানাভাবে স্মরণ করছেন শাহ আবদুল করিমকে।
এদিকে এই সাধকের সুরধারাকে বিকৃতভাবে না গাওয়ার দাবিও তুলেছেন বাউলভক্তরা।
শাহ আবদুল করিম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আপেল মাহমুদ বাউল বলেন,জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা শাহ আবদুল করিম না থাকলেও গানে আর সুরে তিনি আমাদের মাঝে থাকবেন অনন্তকাল। তবে সবার প্রতি অনুরোধ তার গান যেন কেউ বিকৃতভাবে না গায়। তাকে অশ্রদ্ধা না করে।
উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ, দুদ্দু শাহ, দূরবীন শাহর দর্শনে অনুপ্রাণিত ছিলেন এই বাউল সম্রাট। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক ছাড়াও তিনি পেয়েছেন সিটিসেল-চ্যানেল আই সম্মাননা, সিলেট সিটি করপোরেশন নাগরিক সংবর্ধনা, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, অভিমত, শিল্পকলা একাডেমি, খান বাহাদুর এহিয়া সম্মাননাসহ বহু পদক ও সম্মাননা। ২০০৯সালের ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আপনার মতামত জানান