সোনারগাঁয়ে দূষিত বর্জ্যে হুমকি, নিরব প্রশাসন
ডেইলি সোনারগাঁ :
বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানী, বর্তমানে বিশ্ব কারুশিল্প শহর ও শিল্পাঞ্চলখ্যাত সোনারগাঁয়ে একটি কারখানার দূষিত রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদী-জলাশয়ে নিস্কাশন করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সোনারগাঁয়ের চারদিক দিয়ে প্রবাহিত খাল ও নদীগুলো রাসায়নিক বর্জ্যে এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে, এসব খাল ও নদীর পানি অনেক আগেই ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে। মারীখালী, ব্রহ্মপুত্র নদ, ঐতিহাসিক পঙ্কীরাজ খাল, রীতিমতো বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এর দূষণের বড় কারণ চৈতী কম্পোজিট, ক্যান্টাকি গার্মেন্টস, মেঘনাগ্রুপের অপরিশোধিত বর্জ্য নিষ্কাশন। খাল-বিল, নদ-নদী সহ পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে ইটিপির মাধ্যমে পানি শোধন করার আইন থাকলেও তা মানছে না। ফলে কারখানার আশপাশের শিশু ও বয়োঃবৃদ্ধ সহ হাজার হাজার মানুষ পানি ও বায়ু বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সোনারগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর লায়ন মোশারফ জানান, ‘চৈতী কম্পোজিটের প্রকাশ্যে প্রতিঘন্টায় ৭০ হাজার গ্যালন বর্জ্য মারীখালীনদ, পঙ্খীরাজ খাল দিয়ে অবৈধভাবে নিস্কাশন করছে। ইটিপির মাধ্যমে বর্জ্য শোধন ব্যয়বহুল বলে তা ব্যবহার করছে না। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকক্ষ কারখানা পর্যবেক্ষন করতে আসলে অল্প সময়ের জন্য ইটিপি চালু করে। পরে আবার বন্ধ করে দেয়।
পঙ্খীরাজ খাল, মারীখালী, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষা ও মেঘনা নদীতেও প্রতিদিন নির্বিচারে বর্জ্য পতিত হচ্ছে। কোম্পানীগুলো যখন অপরিশোধিত তেলের বর্জ্য মেঘনা ও মারীখালী নদে ফেলে তখন মেঘনা নদীর গভীর থেকে চিংড়িসহ অনেক মাছ মরে ভেসে ওঠে বলে জানান নদী তীরের বাসিন্দারা। তারা জানান, এভাবে চলতে থাকলে মেঘনা নদীও এক সময় বুড়িগঙ্গায় পরিনত হবে। দূষিত বর্জ্যের কারনে সোনারগাঁয়ে মাটির ওপরের ও নিচের পানি পানযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূগর্ভে পানি সঙ্কটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিতে অপরিমেয় আর্সেনিক মিশ্রণ ঘটেছে। আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পানযোগ্য নয় এবং ফসলাদি আবাদের জন্যও উপযুক্ত নয়। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি মানুষের জন্য যেমন অপরিহার্য তেমন জীবজন্তু, বৃক্ষলতা, ফসলের জন্যও অপরিহার্য। দূষিত পানি রোগ-ব্যাধির প্রধান কারণ। কাজেই সর্বাগ্রে নদী-জলাশয় দূষণমুক্ত করতে হবে, দূষণের প্রক্রিয়া রহিত করতে সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন জরুরি।
কবি রহমান মুজিব জানান, বর্জ্য পানির দূর্গন্ধে বায়ু দূষণও সোনারগাঁয়ে ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। দূষণযুক্ত এলাকায় মানুষ নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছে নানা প্রকার বিষ ও স্বাস্থ্যহানিকর উপাদান। এ কারণে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ ক্রমবর্ধমান। বলা যায়, পরিবেশের সব মৌলিক উপাদানই কোনো না কোনোভাবে দূষণের শিকার। পরিবেশ দূষণের মাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য হলেও কোনো ক্ষেত্রেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঙ্খিত পর্যায়ে নেই।
আপনার মতামত জানান