প্রবাসীরা নিজের জীবন উৎসর্গ করছে পরিবারের সুখের জন্য
বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল নিজের কাঁধে তুলে নিতেই প্রবাসী হয় ষোল বছর বয়সের রেহান(ছদ্মনাম)।দুই বছর আগে বাড়ি থেকে একজোড়া জুতা নিয়ে এসেছিলো। বর্তমানে জুতার অবস্থা খুবই খারাপ। জুতার কি দোষ? পরিবারের ঘানি টানতে জুতার উপর দিয়ে তো আর কম ঝড় বয়নি। শুধু জুতা নয়, জামা, ঘড়ি ও প্যান্ট কোনটাই পড়ে থাকার মতো নয়, তবু যা পায় তাই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এসব জিনিস দেশে পড়ে থাকলে সবাই ভিক্ষুক মনে করবে। বিদেশে যে করে না তা নয়। শান্তনা বিদেশে অধিকাংশ বাঙালী প্রবাসির একই অবস্থা।
বাড়ির কথা চিন্তা করে হ্যাং হয়ে যাওয়া মোবাইলটাও পাল্টাতে পারছে না। বাড়িতে টাকা না পাঠালে যদি পরিবারের কষ্ট হয়। তার অনেক কিছুরই দরকার কিন্তু টাকা নেই। মাস শেষে সব টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে নিজের জন্য কিছুই কেনা হয় না। তবু টাকা হাতে পেয়ে সে নিজের ঠোট কামড়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিজেকে নিজে ভিড় ভিড় করে বলে, আমার কিছু লাগবে না। টাকাটা বাড়িতে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেব, মা কিছু কিনবে। আমি ছুটিতে দেশে গিয়েই কিনব।
এভাবে সব প্রবাসীরা নিজের জন্য নয় নিজেকে উৎসর্গ করে পরিবারের সুখের জন্য। হয়ত কোনো এক সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করবে আর তখনই সে পরিবার থেকে অবহেলা, ঘৃণা পেতে থাকবে। তাদের ভাবসাব এ রকম, প্রবাসীরা নিজের ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করতে পারবে না। চিন্তা করলেই পরিবার থেকে সে বঞ্চিত।
এই রেহানের বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব তার উপর, তাই সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জীবন মানে কি? কিন্তু দেশে থেকে পরিবারের কেউ এমনকি মাঝে মাঝে নিজের গর্ভধারিনী মা পযন্ত ছেলেন কষ্টের কথা বুঝতে চায় না। সবার ধারনা বিদেশে টাকার গাছ আছে, প্রবাসীরা গাছে উঠবে আর টাকা নিয়ে আসবে।আর অনেক স্ত্রীরা তো স্বামীর রক্তপানি করা অর্জিত অর্থে অন্যনাগরের সাথে রঙের ঘোড়া দৌরাতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কষ্টের রেমিট্যান্সের মূল্য কেউ দিতে চায় না।
দেশের মাটিতে পা রাখার সাথে সাথেই তাদের উপর অবিচার শুরু হয় বিমান বন্দর থেকে। বিমান বন্দরের কর্মকর্তারা প্রবাসীদের মানুষই মনে করে না। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার জন্যই যেন তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাড়িতে গেলে তার প্রবাসীর দিকে কেউ তাকায় না, তাকায় তার লাগেজের দিকে। চাহিদা মতো জিনিস আনতে না পারলে ভাই ভাই থাকে না, বোন বোন থাকেনা সবার একই অবস্থা। এরপর শুরু ঝগড়ার তাকে দিলো আমাকে দিলো না। নানা অশান্তি সহ্য করতে না পেরে ছয়মাস ছুটি এনে দু‘মাস পরেই উড়াল। সে উড়ালের সাথে সুখও হয়তো উড়াল পথে…
আপনার মতামত জানান