মামলা তুলে নিতে বাদীকে খুন করে লাশ গুমের হুমকি ওসির
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক ও এসআই বাতেনসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন এক ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান আলম প্রধানের আদালতে এই মামলা দায়ের করেন দুলাল আহমেদ দুলন নামে এক ব্যবসায়ী। এর আগেও তার স্ত্রী নবিউন নাহার ওসির বিরুদ্ধে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে তার স্বামীকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে দুলাল আহমেদ দুলন তাকে নির্যাতন করায় স্ত্রী নবিউন নাহার কর্তৃক পুলিশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রাণনাশের হুমকি ও ওসির হুকুমে ও এসআই বাতেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা করে তার হাত ভেঙে দেওয়ায় এই মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করলেও বুধবার আদেশ প্রদান করবে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ অক্টোবর নবিউন নাহার তার স্বামী ব্যবসায়ী দুলাল আহমেদ দুলনকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ওসি শেখ নাজমুল হকসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। গত ১৯ অক্টোবর রাত দেড়টায় ওসি নাজমুল হকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ দুলনকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর তাকে থানায় নির্মমভাবে নির্যাতন করে পুলিশ। একপর্যায়ে আহত অবস্থায় তাকে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ওই মামলায় দুলনকে নির্যাতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ওসি নাজমুল হকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চা পাতা, টায়ারসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ মালপত্র চুনারুঘাটে প্রবেশ করে। দুলনসহ এলাকাবাসী বিষয়টি বিজিবিকে জানান। পরে বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে মালপত্র আটক করে। এর পর থেকেই ওসিসহ চোরাকারবারিরা দুলনের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুলনকে আটক করে নির্যাতনের পর গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে নবিউন নাহার মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর বর্তমানে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ওসি শেখ নাজমুল হক মামলাটি আপস করার জন্য দোলন ও তার স্ত্রী নবিউন নাহারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছেন। ফলে দুলন মামলা দায়ের করেন।
দুলনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান খান সজল জানান, ওসির বিরুদ্ধে পূর্বের দায়েরকৃত মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য দুলন ও তার স্ত্রীকে ওসি ও তার লোকজন বিভিন্নভাবে চাপ ও হুমকি দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দুলনের শরীরের হাড় মাংস এক করে দিবেন কিংবা খুন করে লাশ গুম করে ফেলবেন বলে ফোনে হুমকি দেন। থানার দালাল ও মামলার ৯ নং আসামি আব্দুল হাই প্রিন্স এর মোবাইলে তিনি এই হুমকি দেন।
তিনি আরো জানান, গত ১০ ডিসেম্বর মামলার বাদী দুলন মিয়া তার ব্যবসার বকেয়া টাকা আদায় করার জন্য চিমটিবিল এলাকায় গেলে ওসি শেখ নাজমুল হক ও এসআই বাতেন এর নেতৃত্বে আসামিরা দুলনকে আক্রমণ করে এবং তার দুই হাত ভেঙে দেয় এবং নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লুটপাট করে। দুলনকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তার হাতে অপারেশন করে প্লেট বসানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মামলাটি দায়ের করার পর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান আলম প্রধান মামলাটি গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে বুধবার আদেশ প্রদান করবেন।
এ ব্যাপারে দুলাল আহমেদ দুলাল বলেন, ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে আমি চোরাচালানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এখন আমার জীবন সংকটাপন্ন। আমার ভাই ছিলেন চেয়ারম্যান ও আমার পরিবারে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা সরকারি দলের সাথে জড়িত থাকার পরও পুলিশ আমাকে বার বার নির্যাতন ও হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চুনারুঘাট-মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন জানান, তিনি মামলা হওয়ার বিষয়টি শুনেননি।
হবিগঞ্জের আদালত পরিদর্শক আল আমিন জানান, একটি মামলা হয়েছে তবে কোনো আদেশ এখনও হয়নি।
(সুত্র: কালের কন্ঠ)
আপনার মতামত জানান