ক্ষমতা কুক্ষিগত আ’লীগের অশনী সংকেত
বর্তমানে সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী আসনে স্থানীয় সরকারের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তারা লোকাল গর্ভমেন্ট হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি দলীয়ভাবে উপজেলার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। দলীয় সকল কারযক্রমে, আন্দোলনে, প্রতিবাদ, প্রতিরোধে রাজপথের অগ্রসৈনিক দলীয় সভাপতি, সাধারন সম্পাদক সমন্বয়ে উপজেলা কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ। তাই নেতৃত্বের বিকাশ, দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করতে ক্ষমতার সুষম বন্টনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের জন্য সম্মেলন। অতীতে দলের সভাপতি কিংবা সম্পাদক যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতো তবে স্বেচ্ছায় তিনি সভাপতি/সম্পাদকের পদ ছেড়ে নতুন নেতা সৃষ্টি করে দলের কাযক্রম বেগবান করতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করতেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কাউন্সিলের আগে, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দলের সভাপতি স্থানীয় পর্যায়ে এমপিদের একজন কর্তৃত্বের অবসান চান।
দলের সভাপতির ইচ্ছা অনুযায়ী এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
উপজেলা পর্যায়ে এমপি এবং উপজলা চেয়ারম্যানরা মিলে মিশে দল করছেন, ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দলের নিবেদিত, আদর্শবান কর্মীরা ভালো জায়গা পাচ্ছে না। দলকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি, এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আলাদা করার এখনই মোক্ষম সময় । একজন এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানের অনেক সরকারী এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থাকে। এসব দায়িত্ব পালন করে তার পক্ষে, দলকে সময় দেয়া কঠিন হয়ে যায়। দল চালায় তার অনুগতরা। দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙ্গে পরে।’ এরকম অবস্থার অবসান হওয়া খুবই জরুরি।
একজন এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যান অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঠিক মতো কাজ করছেন কিনা, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন কিনা তা দেখভাল করবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাছাড়া, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ব্যস্ত থাকার কারণে দলে সময় দিতে পারেন না, ফলে সংগঠন দূর্বল হয়ে পরছে। সুত্র মতে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অনেকাংশেই মন্ত্রী, এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্ভর হয়ে গেছে। এর ফলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। আ’লীগের প্রভাবশালী নেতারা মনে করেন ‘টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে দল ক্ষমতার বৃত্তে আটকে গেছে। এখান থেকে দলকে বের করতে হবে।’ তাই প্রয়োজন দলে ত্যাগী নেতাদের ক্ষমতায়ান।
নারায়ণগঞ্জ জেলার দুটি উপজেলার সম্মেলনে মন্ত্রী-এমপিদের থানা কমিটির সভাপতি হওয়া নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের তৃনমূলের মতে, এভাবে মন্ত্রী-এমপিরা যদি থানা আওয়ামী লীগের পদ দখলে নেয় তা হলে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না। এ ক্ষেত্রে যারা দীর্ঘদিন ধরে তৃনমূলের রাজনীতি করে আসছে তারা রাজনীতি থেকে নিস্ক্রীয় হয়ে পরবে। রূপগঞ্জ আসনের এমপি ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও আড়াইহাজার আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু নিজেরাই সভাপতির পদ দখল করে দলের অগ্রযাত্রার লাগাম টেনে ধরেছেন। মন্ত্রী-এমপিরা দলীয় পদ কুক্ষিগত করায় উপমহাদেশের পুরনো এ রাজনৈতিক দলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মন্ত্রী, এমপি কিংবা মেয়রদের একাধিক পদ আকড়ে থেকে রাজনৈতিক চর্চা এখনি বন্ধ করা প্রয়োজন। অন্যথায় তৃনমূলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কারনে ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বহীনতা আওয়ামী লীগের অশনী সংকেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
আপনার মতামত জানান