সোনারগাঁয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ১৮০টি গৃহনির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  ঘর পাননি ১৮ টি হতদরিদ্র পরিবার। এছাড়াও প্রকল্পের ঘর অনেক জনপ্রনিধিদের বাড়িতে উঠিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত কারীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন প্রকল্পের উপকারভোগীরা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ প্রকল্পে যার ১ থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে ঘর নেই, তাঁর নিজ জমিতে গৃহনির্মাণে একটি ঘরের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দেওয়া তালিকা যাচাই-বাছাই করে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন থেকে গৃহহীনদের নির্বাচিত করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহহীনদের পুনর্বাসিত করার জন্য এ প্রকল্প সরকার হাতে নেয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্প -২ এর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাঠানো সোনারগাঁয়ের তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলাম এক প্রতিবেদনে জানান, তালিকাভুক্ত ১৮০ টি হতদরিদ্র পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর নিমার্ণ করে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জামপুর ইউনিয়নের কালারটেকের বিধাব সুফিয়া বগেম, ব্রাহ্মণবাওগাঁ গ্রামের দরিদ্র অসহায় মৃত কাজিমউদ্দিনের ছেলে ইউসুফ, সোনা মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া, জামপুর গ্রামের সুলতান আলীর ছেলে মজিদ মিয়া, হাছিমদ্দিনের ছেলে খোকন মিয়া, সেকেরহাট গ্রামের ওয়াজদ্দিনের ছেলে জজ মিয়া, কাজীপাড়া গ্রামের বিধাব ফিরোজা বেগম এখনো ঘর পায়নি। মুছারচর গ্রামের আনসর আলীর ছেলে আঃ হক ও সাহিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শুধু কাঠের ফ্রেম করা হয়েছে। তারা জানান, তিনমাস আগে ঘরের পিলার বসিয়ে কাঠের ফ্রেম করা হলেও সরকার এখনো টিন, ইট, বালু না দেয়ায় পুরো কাজ শেষ হচ্ছে না। তবে শুনেছি টিন এসেছে। দু’একদিনের মধ্যে মিস্ত্রী এসে হয়তো কাজ করতে পরে। সাহিদা বেগমের স্বামী হযরত আলী বলেন, গরিব মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় আমরা আনন্দিত। আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর নেক হায়াতদান করুক। উপজেলা বাস্তবায়ন অফিসসুত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তাদের ঘর হস্তান্তর দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে পুরোটাকা উঠিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান হামিম সিকদার শিপলু। হামিম সিকদার শিপলু জানান, যারা এখনো ঘর পাননি তাদের দ্রুত ঘর নির্মাশ করে দেয়া হবে।

এছাড়াও কাচঁপুর ইউনিয়নে ৫ টি এবং সাদিপুর ইউনিয়নে ৫ টি হত দরিদ্র পরিবার কোন ঘর পাননি। বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের গিয়ে দেখা যায়, ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য আমেলা বেগম তার ছেলে বোরহানউদ্দিনের নামে, ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সুরাইয়া বেগমের স্বামী ইব্রাহিম মোল্লার নামে ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ারা বেগম তার মেয়ে হলেনা আক্তারের নামে, ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোবারক হোসেন তার ভাই আবু তাহেরের নামে এবং ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইসমাইল হোসেন তার ভাই বাদল হোসেনের নামে ঘরের তালিকা তৈরি করে সকলকে তাদের ঘর হস্তান্তর করেছেন। সদস্যরা প্রতিবেদককে জানান, এটা কার আমাদের অন্যায় হয়েছে। ভবিষতে আর এমনটি হবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মালামাল ক্রয়সহ ঘর হস্তান্তরের জন্য তিনসদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি হলেও তৎকালীন ইউএনও ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি কাউকে না জানিয়ে এমনকি কোন কাগজপত্রে সদস্যসচিব উপজেলা বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের স্বাক্ষর পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। অথচ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা পরে জানতে পারি।
এ ব্যাপারের তৎকালীন ইউএনও শাহীনুর ইসলাম বলেন, হতদরিদ্র পরিবারগুলো যাতে দ্রুত ঘর পায় সেজন্য সবাইকে টাকা উত্তোলণ করে দেওয়া হয়েছে। এখনও ঘর তোলা বাকি আছে জেনে তাদেরকে দ্রুত কাজ করার জন্য বলেছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তখন নির্মাণকাজ শেষ না করা ১৩টি ঘরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। তবে মালামাল ক্রয়ের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না।

নবনিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, আমার আমলে এ প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজ করা হয়নি। তবে বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

আপনার মতামত জানান