শেখ মুজিবের মৃত্যু নেই

প্রকাশিত

মোশতাক কমিউনিস্ট ছিলেন না; নন-কমিউনিস্ট। বড়াই করে বলতেন, তিনি হচ্ছেন অ্যান্টি-কমিউনিস্ট। সেই অ্যান্টি-কমিউনিস্টরাই ষড়যন্ত্র করেছে এবং হত্যা করেছে শেখ মুজিবকে। কারণ তারা চাইছিল বাংলাদেশকে পরিণত করবে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে; মুজিব সেই কাজে ঠিকমতো সহযোগিতা করছিলেন না। তাই তারা তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে। মধ্যবিত্তের যে অংশ অত্যন্ত স্ফীত হয়েছিল, শেখ মুজিব যাদেরকে তাঁর অনুকরণীয় ভাষায় বলেছিলেন, ‘চাটার দল’, তারা এতটা ভারী হয়ে পড়েছিল যে নড়াচড়া করতে পারেনি। যেটুকু করেছে সেটুকু আত্মরক্ষার জন্য, কেউ কেউ এগিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছে ঘাতকদের সঙ্গে।

ঘাতকরা বলত, তারাও মুক্তিযুদ্ধের লোক; নাকি তারাও অংশ নিয়েছিল ওই যুদ্ধে। হয়তো নিয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের ঘাতকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদৌ বিশ্বাস করত না। রাষ্ট্রকে তারা চালিত করতে চেয়েছিল বিপরীত দিকে। ভিন্ন নামে আরেকটি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা চেয়েছিল তারা। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতন্ত্রের পথাভিসারী বাংলাদেশ তাদের জন্য অসহ্য ছিল। নিজেরা ধার্মিক ছিল না মোটেও; ধর্মকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল আচ্ছাদন হিসেবে; যেমন চেয়েছিল তাদের পাকিস্তানি প্রভু ও পূর্বসূরিরা। ঘাতকের পেছনেও ঘাতক ছিল। ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ। মওলানা ভাসানী যে শত্রুদের কথা বলতেন।
শেখ মুজিবের অনুরাগীর অভাব ছিল না। অনুরাগ প্রকাশ করত সুবিধার আশায়। প্রকৃত অনুরাগী তারাই যারা তাঁকে দেখে জনগণের নেতা হিসেবে। মুজিববাদের কথা বাহাত্তরের পরে শোনা যেত, এখন যায় না। মুজিববাদীরা শেখ মুজিবের মিত্র ছিল না। তাঁর সঙ্গে এরা যা করেছে সে-কাজটা মিত্রের বেশে শত্রুতা। শেখ মুজিবের প্রকৃত অনুরাগী তারাই, যারা তাঁকে জনগণের নেতা হিসেবে চেনে এবং বাহাত্তরের পর থেকে তারা ক্রমবর্ধমান জনবিচ্ছিন্নতার কথা স্মরণ করে দুঃখ পায়। শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে মুনাফার রাজনৈতিক ব্যবসা করেছে তাঁরই দল এবং দলীয় লোকজন।

আপনার মতামত জানান