গ্রামের পথ আটকানো বিসিকের দেয়ালে

প্রকাশিত


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিলুটিয়া গ্রাম। যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে সম্প্রতি গড়ে ওঠা বিসিক শিল্পপার্কের পূর্বদিকে আধা কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। যমুনা নদীবেষ্টিত গ্রামটি প্রতিবছরই নদীভাঙন ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। ৫০০টির বেশি পরিবারে সেখানে ১৫০০ থেকে দুই হাজার মানুষের বসবাস। তাদের প্রধান পেশা কৃষি। কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। শুধু কি তাই, চাইলেও তারা নিরবিচ্ছিন্ন যাতায়াত করতে পারছেন না।


এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে শুধু গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র পথের ওপর দেওয়াল তৈরি করায়। বিসিক শিল্পপার্কের এই দেওয়ালের পাশে গ্রামবাসীর যাতায়াতের রাস্তা তৈরির কথা থাকলেও তা শুধু আশ্বাসের মধ্যে আটকে আছে। কবে নাগাদ এ রাস্তা তৈরি হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচলের পথ তৈরি না করলে তারা আন্দোলনে নামবেন। যদিও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী, পশ্চিম মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলুটিয়া ও মোরগ্রাম মৌজার অংশ নিয়ে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বিসিক শিল্পপার্কটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি চার বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলে ব্যাপক দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে ১৪ বছর পর কাজ শেষের ঘোষণা দেন প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়োজিদ। যদিও এই কার্যক্রম ২০২৪ সালের ৩০ জুন কাগজে-কলমে শেষ হয়েছে। কিন্তু বাউন্ডারিতে কাঁটাতারের বেড়া, লেক ঢালায়ের নির্মাণকাজ এখনো চলমান রয়েছে।


স্থানীয়দের অভিযোগ, বিসিক শিল্পপার্কের নকশা তৈরির সময় গ্রামবাসীর চলাচলের কোনো রাস্তা রাখা হয়নি। বিসিক শিল্পপার্কের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাফর বায়াজিদ এর আগে সীমানাপ্রাচীরের পাশে রাস্তা তৈরিতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পদোন্নতি পেয়ে অন্য জেলায় চলে যাওয়ায় সেই কাজ আর কেউ শুরুই করেননি। এ ছাড়া একজন জনপ্রতিনিধিও দিয়েছিলেন এমন প্রতিশ্রুতি। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক। তাই রাস্তা বানানোর উদ্যোগের পালে আর হাওয়া লাগেনি।


বেলুটিয়া গ্রামের কৃষক সমাজ আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দা চরের জমিতে কৃষিকাজ করেন। আমাদেরকে সব সময় নদীভাঙন এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। এখন চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে রেহাই পাব তাও বুঝতে পারছি না। আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই।’

হায়দার আলী নামে ওই গ্রামের আরেক কৃষক বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ থাকায় আমাদের উৎপাদিত শাক-সবজিসহ অন্য ফসল শহরে নিয়ে বিক্রি করতে পারছি না। খুব প্রয়োজন হলে বিসিক শিল্পপার্কের দেওয়াল টপকে মালামাল পারাপার করতে হচ্ছে। এটা করতে খুবই কষ্ট হয়। কার কাছে গেলে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে তাও জানি না।’


স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সবুর আলী শেখ বেলুটিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য একটি রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে থাকায় সেই রাস্তা আর বানানো হয়নি। এতে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের শেষ আশার আলো নিভে গেছে জানিয়ে বেলুটিয়ার আরেক বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিসিক শিল্পপার্কের প্রকল্প পরিচালকও আমাদের জন্য রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পদোন্নতি পেয়ে তিনি অন্য জেলায় চলে গেছেন। আমাদের রাস্তা বানানো আর হলো না।’


গ্রামবাসী জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা বানাতে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে তারা ছাত্র প্রতিনিধি ও জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।

বিসিকের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও বিসিক শিল্পপার্কের প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়াজিদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিক আবেদন করা হয়েছে। তারা যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমি কী করব?’ আর কোনো প্রশ্ন করার আগেই তিনি লাইনটি কেটে দেন।


সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মতামত জানান