বিসিএস ক্যাডার আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণে

প্রকাশিত


নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরির বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করেছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা মুকিব মিয়া। লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের ইংরেজি বিভাগের এ সহকারী অধ্যাপক গত শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলটির লিফলেট বিতরণ করেন।

লিফলেট বিতরণের ছবি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে অন্তত ১৩টি সংবাদও শেয়ার করেছেন তিনি। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুকিব মিয়া একসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক। চলতি বছরের ২৭ মার্চ নিজের প্রোফাইল ছবিতে শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত করে লিখেছেন, ‘বিজয় আসবেই।’ যদিও সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন না।

এদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন মুকিব মিয়া। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লোভে পাপ, পাপে ইউনূস’, ‘ইউনূস বাহিনীর নির্যাতন নাৎসি হিটলারকেও হার মানায়’, ‘বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দিতে মব সংস্কৃতি চালু করেছে অবৈধ ইউনূস সরকার’সহ বিভিন্ন বিতর্কিত পোস্ট দিয়েছেন।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৩(খ) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ মুকিব মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে। তাঁকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে বলেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মুকিব মিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১০ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তখনও তিনি নিয়মিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠনকে সহায়তা করতে পারবেন না।’ এই বিধান লঙ্ঘন করলে চাকরিচ্যুতির শাস্তির বিধান রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পরও দলটির কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন মুকিব মিয়া। তাঁকে গত ৬ অক্টোবর নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে মাত্র একদিন কাজ করেন তিনি। পরে গত ২১ অক্টোবর তাঁকে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে উপস্থিত হননি।

পাটগ্রামের জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মুকিব মিয়া গত সাড়ে তিন মাসে একবারও কলেজে আসেননি। অনলাইনে যোগদানের আবেদন করলেও এর হার্ডকপি জমা দেননি। সম্প্রতি তিনি তিন মাসের অসুস্থতাজনিত ছুটির আবেদন করেছেন, কিন্তু সঙ্গে কোনো চিকিৎসকের সুপারিশ, ব্যবস্থাপত্র বা প্রমাণপত্র দেননি। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।


মুকিব মিয়া দাবি করেছেন, তিনি লিফলেট বিতরণ করে কোনো চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেননি। তাঁর ভাষ্য, “ড. ইউনূস সংবিধান লঙ্ঘন করছেন, আমি তার প্রতিবাদ করছি। আওয়ামী লীগও প্রতিবাদ করছে। তাই আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করেছি, এতে চাকরিবিধি লঙ্ঘন হয়নি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে, এ দলের লিফলেট বিতরণ করা আমার অধিকার।”

চাকরিতে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, তিনি ছুটির আবেদন করেছেন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

আপনার মতামত জানান