বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে ১৫ কোটি টাকার সোনা উধাও

প্রকাশিত





হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমস হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনার হুদিস মিলছে না। চুরি যাওয়া সোনার দাম বর্তমান বাজারদরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সোনা চুরির বিষয়টি ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে শনিবার। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল রবিবার।


জানাজানি হওয়ার পর থেকে পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। এদিকে এমন সুরক্ষিত স্থান থেকে কিভাবে এই চুরির ঘটনা ঘটল এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে।

জানা গেছে, এসব সোনা যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করার পর ঢাকা কাস্টমস হাউসের গুদামে রাখা হয়েছিল। সাধারণত যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা সোনার বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস গুদামে রাখা হয়।


শুল্ক বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, চুরি হওয়া এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এতদিন ধরে এত পরিমাণ সোনা বিমানবন্দরের গুদামে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে চারটি শিফটে কাজ হয়। এই শিফটগুলোতে জব্দ হওয়া সোনা এক গুদামেই রাখা হতো এতদিন।

তবে স্বচ্ছতা আনার জন্য ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ শিফটভিত্তিক জব্দ হওয়া সোনা আলাদা আলাদা লকারে রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি নির্দেশ দেন, যে শিফট জব্দ করবে তাদের জব্দ করা সোনা তাদের লকারে থাকবে।
বিমানবন্দরের সূত্র বলছে, কাস্টমসের গুদামে কাস্টমসের কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের সুযোগ নেই। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনা আমার জন্য বিব্রতকর। চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে আমরা ইনভেন্টরি করছি।

নিশ্চিত হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, কাস্টমসের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে। তারপরে আনুষ্ঠানিকভাবে কি কি খোঁয়া গেছে তা জানাবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দরের সূত্র বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই রয়েছে কাস্টমসের গুদাম। সোনার অলংকার ও সোনার বার মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কেজি সোনা কাস্টমসের গুদামের একটি আলমারিতে বাক্সের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। আলমারি ভেঙে সেই বাক্সটিই চুরি করা হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের সহকারী ও যুগ্ম কমিশনার পদের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলেও তাদের কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। বিমানবন্দরে কর্মরত সংস্থাগুলোর কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা যায়, বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। পুরো বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়ার বিষয়টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, এমন একটি জায়গা থেকে কিছু চুরি হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিক। তিনি বলেন, সোনা চুরির এই ঘটনায় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে এই ঘটনায় কারা জড়িত, সেটা বের করার কাজ চলছে।

এই বিষয়ে রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া বলেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা চোর বা, চোরদের আসামি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তে নামছি।

আপনার মতামত জানান