জন্ম ও যন্ত্রণার ইতিহাস – তৌহিদ এলাহী
ইতিহাসে যখনই নির্দিষ্ঠ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রাচুর্য , রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতিবোধের উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প সাধনা শক্তিশালী হয়েছে, সেখানেই সভ্যতার বীজ অঙ্কুরোদগমিত হয়ে শিকড় অনেক গভীরে ও ডালপালা চারদিকে ছড়িয়েছে।
যাইহোক আমরা এখন যা করি তা আমাদের মধ্যে এসেছে হাজারো বছরের প্র্যাক্টিস ও চেইঞ্জের মধ্য দিয়ে।১০ হাজার বছর আগে শিকারী ছিলাম, এখনো দুর্বলদের মেরে আনন্দ পাই। সামনে খাবার পেলে সবকিছু গোগ্রাসে খাই, কারণ এমনটাই করেছে আমাদের পূর্বপূরুষেরা। তারা শিকার বা সামনে কোন খাবার পেলে প্রথমে নিজেদের উদরপূর্তি করত গলা পর্যন্ত। অনেকে খাবার সংগ্রহ করে রাখা বা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করাকে অপমানজনক মনে করত। নানা পর্যায়ে তারা নানা ধরণের খাবার খেয়েছে-তার মধ্যে সবচেয়ে মজাদার হচ্ছে স্বজাতির মাংস।
আদিম সমাজ সাম্যবাদী, জঙ্গলে কেউ খেতে বসলে খাওয়ার আগে চিতকার করত, যাতে আশে পাশে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে সে খেতে পারে। তারা একে অপরের প্রতি অত্যন্ত বিবেচকের মত আচরণ করত যা সভ্য সমাজে দেখা যায় না। তবে সম্পত্তি সকলের হওয়ায় কেউ কেউ অলস আচরণ করে সুবিধা নেয়ার চেষ্ঠা করত। আদিম সমাজ যতদিন এ সাম্যবাদী আচরণ ধরে ততদিন সভ্যতার দিকে বেশিদূর এগুতে পারেনি। প্রাচুর্যতা শুরুতেই সাম্যবাদের সমাপ্তি।
দাসপ্রথা সভ্যতার এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। দাসপ্রথার আগে বন্দিদের নেয়া হত কসাইখানায়, সুস্বাদু মাংসের লোভে। কৃষি বিকাশের সাথে প্রয়োজন পড়ে শারিরীক শ্রমের, যা যুদ্ধবন্দীদের খাবার মাংস হতে দাসে রুপান্তরিত করে। যুদ্ধের কারণে শাসন ব্যবস্থা শুরু হয়েছে, আইন-কানুনের সূচনা হয়েছে।
ধর্ম মানুষকে সংগঠিত করেছে। ধর্মশালা হতেই আদিম সংগীত, শিল্পকলা, সাহিত্যের সূচনা হয়েছে।
মানুষের যখন যা প্রয়োজন ছিল, সে অনুযায়ী দেবদেবী নির্ধারণ করেছে। শিকারী যুগে আগুন পশু পাখি ছিল দেব দেবী, কৃষিভিত্তিক সমাজে সেটা হয়ে যায় চন্দ্র-সূর্য।
আদিম নারী পুরুষে কোন ভেদ ছিল না। বরং সেমেটিক ধর্মগুলো সহ পূর্ববর্তী গোত্রীয়গুলো চালু হওয়ার পরেই নারীকে দূর্বল অপবিত্র হিসেবে দেখিয়ে দমিয়ে রাখা শুরু হয়। ইন্টারকোর্স নিয়েও কোন বাধাধরা নিয়ম ছিল না, নিয়মিত পার্মানেন্ট সঙ্গী ধারণাটা বেশ নতুন। আর সতীত্ব পুরূষদের আবিষ্কার, যেখানে তারা নিশ্চিত হতে চেয়েছে তার অর্জিত ধন সম্পদ অন্য কোন কোকিলের সন্তান না পায়। রজস্রাব ও সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়াকে নিজ সুবিধার্তে অপরিচ্ছন্ন বলায় পরবর্তীতে এটিকে ট্যাবু হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।
নারীরা নিজদের প্রয়োজনে আবিষ্কার করেছে গর্ভপাত, শিশুহত্যা বা জন্মনিরোধক। এখন এগুলো শুনলে খারাপ লাগলেও একসময় হয়ত এখনকার মত কন্ডম ব্যবহারের পর্যায়ের অনৈতিক কাজ হিসেবে বিবেচিত হত। বিকলাংগ, রোগা জারজ সন্তানদের জন্মের পর পর হত্যা করা হত। পরিমিত শিশুহত্যা অনেকসময় গোত্রগুলোকে আকারে ছোট রেখে একসাথে দীর্ঘদিন থাকার সুযোগ করে দিত।
—
Ref: Will Durant, History of Civilisation ( Bangla Translation)
আপনার মতামত জানান