চালে পুষ্টি মেশানো, ব্যয় ৫৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত



বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি) এ পর্যন্ত জিংকসমৃদ্ধ ধানের সাতটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ব্রি-৮৪ জাতের প্রতি কেজি ধানে ২৭ মিলিগ্রাম জিংক পাওয়া যায়। আর সম্প্রতি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নতুন উদ্ভাবিত জাত বঙ্গবন্ধু ধান১০০-এ জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫.৭ মিলিগ্রাম।

কিন্তু মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ (ভিডাব্লিউবি) কর্মসূচিতে চালে বিশেষ পদ্ধতিতে পুষ্টি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দুই বছর মেয়াদি এ কর্মসূচিতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

চালে পুষ্টি মেশানোর ওই বিশেষ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে কার্নেল পদ্ধতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে পুষ্টি মেশানো হলেও চাল ধোয়ার পর কিংবা গুদামে মজুদ করলে পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাঁরা এই কর্মসূচিতে দেশে উৎপাদিত জিংকসমৃদ্ধ ধানের চাল ব্যবহার করা উত্তম ও সাশ্রয়ী বলে মত দেন।

ভিডাব্লিউবি কর্মসূচি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশের গ্রামীণ দুস্থ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাস্তবায়িত একটি সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি। খাদ্যবান্ধব এই কর্মসূচির আওতায় বছরে ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্থ মহিলাকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

সম্প্রতি ভিডাব্লিউবি কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভা হয়। তাতে কর্মসূচির ব্যয় নির্ধারণে অদক্ষতার বিষয়টি আলোচনা হয়। বৈঠকে কেউ কেউ প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রি উদ্ভাবিত জিংকসমৃদ্ধ সাতটি জাতের মধ্যে ব্রি ৬২, ৬৪, ৭৪, ৮৪, ১০০ ও ব্রি ধান ১০২ জাত কৃষক পর্যায়ে চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ব্রি ৭৪ জাতটির আবাদ হচ্ছে বেশি। এই জাতের চালের দাম বাজারে স্বাভাবিক চালের মতোই। তাই চালে জিংক মেশানোর জন্য ৫৮ কোটি টাকা খরচ না করে ব্রি-৭৪সহ অন্য জিংক সমৃদ্ধ চাল সংগ্রহ করার পক্ষে মত দিয়েছেন কেউ কেউ।

অতি সম্প্রতি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নতুন উদ্ভাবিত জাত বঙ্গবন্ধু ধান১০০-এ জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫.৭ মিলিগ্রাম। দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬.৮ শতাংশ। চাল মাঝারি চিকন এবং নাজিরশাইলের মতো। ফলে দুস্থ মহিলাদের এই চাল বিতরণ করলে নাজিরশাইলের মতো চিকন চাল পাওয়া যেত।

এ বিষয়ে ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, জিংক ফর্টিফিকেশন (কৃত্রিমভাবে জিংক মেশানো) কোনোভাবেই টেকসই পদ্ধতি নয়। এভাবে জিংক মেশালে চালের পুষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। দুবার ধোয়ার পরই চলে যেতে শুরু করে জিংক। আবার গুদামে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় রাখলে চাল নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, দেশেই বায়ো ফর্টিফিকেশন বা প্রাকৃতিকভাবে জিংক ও পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ চালের জাত রয়েছে। এসব জাতের চাল পর্যাপ্ত উৎপাদনও হচ্ছে।

ভিডাব্লিউবি কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, চাল দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনোভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল তৈরি করা বা কোথাও পাওয়া না যায়, তাহলে সাধারণ চালই দেওয়া হবে। ফলে আদৌ দেশের দুস্থ মহিলারা পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল পাবে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তিকরণে দুস্থ মহিলাদের কাছ থেকে অনলাইন আবেদনে জনপ্রতি ফি বাবদ ৪০ টাকা করে মোট চার কোটি টাকা আদায় করা হবে। তবে সম্প্রতি ভিডাব্লিউবি অ্যাপ উদ্বোধন করে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছিলেন, বিনা মূল্যে এই আবেদন করা যাবে। ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে ও অ্যাপের মাধ্যমে এই আবেদন করা যাবে।

জানতে চাইলে সাবেক খাদ্যসচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল বলেন, বাজারে যদি পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল পাওয়া যায়, তাহলে বাড়তি টাকা খরচ করা কেন? বরং সেই টাকা দিয়ে আরো বেশি সুবিধাভোগীকে যুক্ত করা যেতে পারে। এতে দেশের মানুষের উপকার হবে। তিনি বলেন, এই ৫৮ কোটি টাকা দিয়ে যে চাল কেনা সম্ভব তা দিয়ে বাড়তি কয়েক হাজার মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত অর্থবছরে ভিজিডি (বর্তমান নাম ভিডাব্লিউবি) খাতে ব্যয় ছিল এক হাজার ৮৩৯ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ওই কার্যক্রমেও নানা অনিয়ম হয়েছে বলে সভার কার্যপত্রে উঠে এসেছে। একবার চাল দিয়ে দুবার পরিবহন খরচ ওঠাচ্ছে মিলাররা। চুক্তিবদ্ধ মিলাররা খাদ্য ও মহিলা বিষয়ক—এ দুই অধিদপ্তর থেকেই এক বিল-ভাউচার দেখিয়ে দুইবার পরিবহন খরচ উঠিয়েছেন।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীনকে এ বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সার্বিক বিষয়ে ভিডাব্লিউবির প্রকল্প পরিচালক শারমিন শাহীন বলেন, পুষ্টি চালের পুরো কার্যক্রম খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে করে। মহিলা অধিদপ্তর থেকে খরচ খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়। টাকা খরচ করে চালের পুষ্টি বাড়ানো কতটা যুক্তিসংগত, জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

সুত্র : কালের কণ্ঠ

আপনার মতামত জানান