খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে চার শিশুর
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রুইয়ার কুল। ইটের সোলিং দেওয়া গ্রামের মেঠোপথ ধরে কিছুদূর গেলে সুদাষ ব্রক্ষ্মা নামে এক ব্যক্তির বাড়ি। শনিবার দুপুর প্রায় দুইটা। পানিঘেরা সুদাষের বাড়িতে ঢুকতেই চোখ আটকে যায় কলপাড়ের একটি দৃশ্যে।
আনুমানিক ৬ থেকে ৭ বছর বয়সের একটি মেয়ে থালা-বাসন ধুয়ে ঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। তার পেছন পেছন ঘরে ঢুকতে চোখে পড়ল আরও হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের। তিন বছর বয়সী সকাল, বড় বোনের ধুয়ে আনা থালা নিয়ে ভাত বাড়ছে। ভাত নিয়ে এসে তরকারি দেও বলে অনেকটা চিৎকার করছে শিশুটি।
এসময় বড় ভাই ১১ বছর বয়সী সজল তরকারির একটি বাসন নিয়ে এগিয়ে আসে। খেতে বসে শিশু সকাল ছোট বোন ১১ মাস বয়সী সুমির মুখে তুলে দিচ্ছে খাবার।
ছোট ছোট প্রত্যেকটি ঘটনা একটি নির্দিষ্ট পরিবারের। মাস দেড়েক আগে চার ভাই-বোন তাদের মাকে হারিয়েছে। সেই থেকে প্রতিদিন অনেকটা এমন দিন কাটে তাদের।
বাবা সুদাষ ব্রক্ষ্মা জানান, এক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন স্ত্রী ঝর্ণা বিশ্বাস। দিনমজুর সুদাষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাই খুব একটা চিকিৎসা করাতে পারেননি স্ত্রীর। দেড়মাস আগে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান ঝর্ণা। মূলত এরপরেই দূর্বিষহ জীবন শুরু হয় সুদাষ ও তার চার সন্তানের।
সুদাষ ব্রক্ষ্মা বলেন, আমার তেমন কোনো সহায় সম্পত্তি নেই। কোনো রকম দিনমজুরি করে চলি। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে চার সন্তানকে নিয়ে খুব শোচনীয় অবস্থায় আছি। না পারছি কাজে যেতে, না পারছি বাচ্চাদের খাবার দিতে। দুই ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেত, তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
৫ম শ্রেণি পড়ুয়া সজল জানায়, আগে স্কুলে যেতাম। মা মারা যাওয়ার পর থেকে আর স্কুলে যাই না। আমি নিজেই ভাত তরকারি রান্না করি। কোনোদিন না খেয়েও থাকতে হয়। কি করব, আর তো কোনো উপায় নেই।
স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বর্ণালী ব্রক্ষ্মা আস্তে আস্তে বলতে থাকে, স্কুলে যেতে ইচ্ছা করলেও পারি না। ভাই বোনদের সঙ্গে থাকি। আর থালা-বাসন ধুয়ে রাখি।
প্রতিবেশী পুতুল বিশ্বাস বলেন, মা হারানোর পর থেকেই খুব করুণ অবস্থা তাদের। ঘরে খাবার নেই, টাকা-পয়সাও নেই। আমরা কোনোরকম সাহায্যে করি। এছাড়া বাড়ির চারপাশেই পানি, কখন কি ঘটে। তাই সুদাষ দা মাঝে মাঝে ওদের আটকে রেখে কাজে যায়। এভাবেই কাটছে তাদের দিন।
স্থানীয় মনিমোহন ব্রক্ষ্মা বলেন, তিন শতক জায়গার ওপরে ভাঙাচোরা ঘর সুদাষের। আয়ের বিকল্প কোনো পথও নেই। এই অবস্থায় ওদের সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার খুব দরকার। এছাড়া শিশুদের ভবিষ্যত নিয়েও সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, খবর পেয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিরকে খাদ্য সহায়তা এবং শিশুদের জন্য দুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের একটি ভিজিডি কার্ড করে দেব। এছাড়া আমি ওই এলাকায় গিয়ে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়দেরও পরিবারটির পাশের দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি।
আপনার মতামত জানান