চিড়িয়াখানায় টাকায় বাইরের প্রাণীর চিকিৎসা

প্রকাশিত



নিয়ম অনুযায়ী বাইরে থেকে কোনো প্রাণী চিড়িয়াখানায় ঢোকানো যায় না। কারণ ওই সব প্রাণী কোনো জীবাণু বহন করলে তাতে চিড়িয়াখানার প্রাণীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু ঢাকার মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় তা মানা হয় না। চিড়িয়াখানার চিকিৎসক বাইরের মানুষের নিয়ে আসা অসুস্থ পোষা প্রাণীর চিকিৎসা করেন এখানে।

চিড়িয়াখানার ভেতরে বহিরাগত প্রাণীর চিকিৎসা হয়—এমন তথ্যের সত্যতা খুঁজতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চিড়িয়াখানায় যান এই প্রতিবেদক। চিড়িয়াখানার সামনের একটি চায়ের দোকানে কথা হয় মিরপুর ২ নম্বর থেকে আসা যুবক সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিই জানালেন, চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল হুদার কাছে তিনি তাঁর অসুস্থ দুটি কবুতর নিয়ে এসে চিকিৎসা করিয়েছেন সম্প্রতি। তিনি ফি নিয়েছেন ৭৫০ টাকা।

এই তথ্য যাচাই করার জন্য এই প্রতিবেদক চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকে কর্মরত প্রহরীদের কাছে যান এবং জানান তাঁর একটি কবুতর অসুস্থ। চিকিৎসক দেখাতে হবে। এরপর একজন প্রহরী ডা. নাজমুলের কক্ষে নিয়ে যান এই প্রতিবেদককে। সেখানে জাহাঙ্গীর নামে হাসপাতালের এক কর্মী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। প্রতিবেদক কবুতরের সমস্যার কথা জানালে ডা. নাজমুল দুটি ওষুধ লিখে দেন এবং ৩০০ টাকা ফি নেন।

পিপল ফর এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, চিড়িয়াখানার ভেতরে বাইরের পশুপাখি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনিতেই চিড়িয়াখানার প্রাণী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।

চিকিৎসক নাজমুলের বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চিড়িয়াখানা থেকে বিক্রি করা হরিণ ক্রেতাকে ধরে দেওয়ার জন্যও তাঁকে টাকা দিতে হয়। প্রতিটি হরিণ ট্রাংকুইলাইজার দিয়ে অজ্ঞান করার জন্য টাকা নেন তিনি।

চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালে বর্তমানে ডা. নাজমুল হুদাসহ তিনজন চিকিৎসক আছেন। তবে এখনো অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগসহ দুটি বিভাগের চিকিৎসকের পদ খালি। হাসপাতালটিতে অন্যান্য কর্মী আছেন সাতজন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাজমুল হুদা বলেন, ‘চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালে বাইরের পশুপাখির চিকিৎসা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি কখনো এই কাজ করিনি, সেখানে ফি নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ’ এই প্রতিবেদকই ৪ জুলাই তাঁর কাছ থেকে কবুতরের জন্য ফি দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখিয়ে আনার কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ডা. নাজমুল হুদার অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় বসে বাইরের প্রাণী দেখবে, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ বাইরের প্রাণী সেখানে ঢোকারই সুযোগ নেই। আর চিড়িয়াখানা থেকে বিক্রীত হরিণ গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করার দায়িত্ব চিড়িয়াখানার, সেখানেও কোনো ধরনের অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। ’

ডা. নাজমুলের বিরুদ্ধে বাইরের প্রাণীর জন্য টাকার বিনিময়ে ওষুধ লিখে দেওয়ার প্রমাণ আছে জানালে পরিচালক বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। আপনার দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখব। এ ব্যাপারে কোনো গাফিলতি হবে না, ব্যবস্থা নেব, এতটুকু বলতে পারি। ’

আপনার মতামত জানান