অনলাইনে নতুন কাপড়ের অর্ডার নিয়ে পাঠাতো ছেড়া কাপড়

প্রকাশিত

২০ থেকে ৩০টি ফেসবুক পেইজ খুলে বিভিন্ন পণ্যসহ শাড়ি ও থ্রি-পিসের চটকদার বিজ্ঞাপন দিত একটি চক্রটি। এসব বিজ্ঞাপনে বিশাল মূল্যছাড়ের ঘোষণাও করত তারা।

পরে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে এসব পণ্যের অর্ডার দিলে ডেলিভারি দেওয়া হত কুরিয়ারে। আর ডেলিভারি পাওয়ার পরই ঘটত বিপত্তি। ক্রেতা প্যাকেট খুলে দেখতেন তিনি যেই পণ্যটি অর্ডার করেছিলেন তার পরিবর্তে চক্রটি ছেড়া ও ব্যবহার অযোগ্য কাপড় পাঠিয়েছে।

অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে বাজে পণ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করত ক্রেতারা। তখন ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করত চক্রটি। সর্বশেষ ক্রেতাদের ফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দিত তারা।

সম্প্রতি ডিএমপির পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী এ সংক্রান্ত একটি জিডি করেন। জিডির পর থেকে এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে রোববার (১৭ এপ্রিল) হাজারীবাগ থানাধীন শঙ্কর এলাকার চার তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে এই চক্রের পাঁচ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. বাপ্পি হাসান, মো. আরিফুল ওরফে হারিসুল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. বিপ্লব শেখ ও নুর মোহাম্মদ। এদের মধ্যে বাপ্পি এই চক্রের মূলহোতা।

ডিবি লালবাগ সূত্রে জানা যায়, ওই চক্রটির গ্রেপ্তার সবার বাড়ি নড়াইল। চক্রটির আরও একটি গ্রুপ নড়াইলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আরও জানা যায়, চক্রটি প্রতিদিন ১০০-১৫০টি প্রতারণা পার্সেল পাঠাত। এভাবে চক্রটি মাসে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করত। গত ৫-৬ বছর ধরে চক্রটি এই প্রতারণা ব্যবসা করে আসছে। চক্রটির সঙ্গে এসএ পরিবহনের লোকজনও জড়িত আছে।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ।

রাজীব আল মাসুদ বলেন, গতকাল রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের চার তলা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি গত ৫-৬ বছর ধরে তাদের এই প্রতারণা ব্যবসা চালাচ্ছিল। চক্রটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজ খুলে আকর্ষণীয় পণ্য বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের চকটকদার বিজ্ঞাপন দিত। স্বাভাবিক মূল্যের অনেক কম মূল্য লিখে তারা এসব পোশাকের বিজ্ঞাপন দিত।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে যায়, গত ৫-৬ বছর ধরে তারা এই প্রতারণার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এরা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এসএ পরিবহনকে ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রতারণা করেছে। আমরা এসএ পরিবহনের কয়েকজনের নাম পেয়েছি যারা এই প্রতারণার বিষয়টি জানেন। আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি, যার মাধ্যমে তারা প্রতারণা করত। আমরা ১৭৭টি খারাপ শাড়ি, থ্রি পিস জব্দ করেছি। এসব কাপড় সাধারণত বাসা বাড়িতে ব্যবহারের পর পুরাতন হয়ে গেলে অনেকে বিক্রি করে দেয় আবার অনেকে মানুষজনকে দিয়ে দেয়। চক্রটি এসব কাপড় কিনে মানুষজনকে ডেলিভারি দিত ভালো পণ্যের নামে।

এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, তারা প্রতি মাসে এভাবে প্রতারণা করে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করত। গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তারা এই প্রতারণা করে আসছিল।

এসএ পরিবহনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিসি বলেন, এসএ পরিবহনের সঙ্গে চক্রটির একটি চুক্তি আছে। সেই অনুযায়ী চক্রটির পার্সেল তারা পাঠাত। এছাড়া এসএ পরিবহনের লোকজন জানত চক্রটি এসব খারাপ মালামাল ক্রেতাদের পাঠায়। চুক্তি অনুযায়ী পার-পার্সেল ৫০ টাকা করে নিত তারা।

ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমাদের একার পক্ষে এই চক্রগুলোকে মনিটরিং করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে মনিটরিং করতে হবে।

আপনার মতামত জানান