‘আসামি’ ধরিয়ে দিতে গিয়ে ভূয়া সাংবাদিকরাই গ্রেপ্তার
আব্দুর রশিদের মেসে সদলবলে এক ‘সাংবাদিক’ হাজির। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রশিদ ও তাঁর রুমমেটকে জিম্মি করেন তাঁরা। পরে পাশের আরেকটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখেন। এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন দুজনের কাছে। চাহিদামতো টাকা না দিলে নারী পাচারকারী বানিয়ে র্যাবের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখান। নির্যাতনের মুখে বিকাশের মাধ্যমে ৪৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন তাঁরা।
এরপর মধ্যরাতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দুই নারী পচারকারী ধরা হয়েছে বলে র্যাবকে ফোন দেন ছয় জিম্মিকারী। সময়মতো চলেও আসে র্যাব। কিন্তু ঘটনাস্থলে এসে ওই সাংবাদিকদেরই গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাব সদস্যরা ততক্ষণে বুঝে যান, এরা ভুয়া সাংবাদিক, চাঁদাবাজ।
র্যাব-৪ এর সিপিসি-১ এর কমান্ডিং অফিসার মেজর কামরুল গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে ভুয়া সাংবাদিক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের নেপথ্য কাহিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সোমবার মধ্যরাতে রামপুরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চক্রের মূলহোতা আজিজুল হক রাজু (৪১), নজরুল ইসলাম (৩৩), অমিত মোল্লা (২৪), শাকিল মাহমুদ (৪২), হাসান (২১) ও শিল্পী আক্তার (৪০)।
মেজর কামরুল জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রাজু নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এক ঘণ্টার মধ্যে টাকা না দিলে চক্রের সদস্য শিল্পী আক্তারকে পাচার করার চেষ্টা চলছে বলে র্যাবের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখান আব্দুর রশিদ ও তাঁর রুমমেটকে। রাজুর দেওয়া তথ্য যাচাই করতে গিয়ে আগেই র্যাব বুঝে যায়, যারা ফোন দিয়েছে তারাই মূলত প্রতারক চক্র।
রাজুকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতারক চক্রটির মূলহোতা রাজু। শুধু রামপুরার ঘটনাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এই চক্রের সদস্যরা। রাজুসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এই চক্রে ১৫ থেকে ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে একজন ভুয়া সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। যদিও তিনি এখন পলাতক।’
গ্রেপ্তারের পর রাজুর কাছ থেকে বিভিন্ন নামে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকার আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মেজর কামরুল। এ ছাড়া নগদ ৪৮ হাজার টাকা, ছয়টি মোবাইল, দুটি চেকের পাতা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
মেজর কামরুল জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কখনো সাংবাদিক আবার কখনো কখনো জায়গা বুঝে সরাসরি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চক্রটি চাঁদাবাজি করে আসছিল। এমনকি রাতে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নিতেন এই চক্রের সদস্যরা।
র্যাব জানায়, বিভিন্ন বাসায় র্যাব কিংবা ডিবি পরিচয় দিয়েও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বিভিন্ন চক্র রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন নতুন প্রতারণার কৌশল। সাংবাদিক পরিচয়েও হচ্ছে চাঁদাবাজি। এসব বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ রকম কিছু বুঝতে পারলে সম্ভব হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।
আপনার মতামত জানান