আড়াই কোটি টাকার মালামাল নিয়ে উধাও নুরা পাগলা

প্রকাশিত



পরিমরি করে একভদ্র থানায় এসেই ওসি সাবহবকে বললেন, ওসি সাহেব সর্বনাশ হয়ে গেছে নুরা পাগলা প্রায় আড়াই কোটি টাকার মালামাল নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এতবড় চুরি আর কখনো হয় নাই। এখন আমি জবাব দিব কি? চুরির দায়ে আমার চাকরির বারোটা বেঁজে যাবে। আপনি কিছু করুন।

ওসি সাহেব শান্তভাবে বললেন, টেনশনে হাপিয়ে গেছেন। এককাপ চা খেয়ে শান্তভাবে বলুন বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

ওসি সাহেব আপনি বুঝতে পারছেন তো কতবড় চুরি। চুরি নয় এতো ডাকাতি। আপনি দ্রুত কিছু একটা করুন।

ওসি সাহেব এবার বললেন, আচ্ছা বলুন তো এতটাকার মালামাল সে কয়টা ট্রাক দিয়ে নিয়ে গেছে সেগুলোর নাম্বার কি আপনার মনে আছে? থাকলে বলুন কাজে লাগবে।

কি যে বলেন, ট্রাক দিয়ে নয়।

বুঝতে পেরেছি বড় কাভার্ডভ্যান দিয়ে। ঠিক আছে ঐটার নাম্বার বলুন!

না! না! ওসি সাহেব কাভার্ডভ্যানও নয়। আপনার তারাহুড়ো দেখে আমার মাথার বুদ্ধি সব গুলিয়ে ফেলেছি বললেন ওসি সাহেব। লড়ি হবে তাই না?

এবার বিরক্তির সুরে ভদ্রলোক বললেন, আরে এসব না নুরা পাগলা একাই এসব নিয়ে গেছে। ওসি সাহেবের চোখ ছানাভরা। এতটাকার মালামাল একজন নুরা পাগলা কিভাবে নিতে পারেন বিশ্বাস হচ্ছিল না বিধায় নড়েচেড় বসলেন। বললেন, এবার বলুন তো আপনার হাসপাতাল থেকে কিকি চুরি হয়েছে। বিস্তারিত বলুন।

হাসপাতাল কর্তপক্ষ এবার বলতে লাগলেন, ওসি সাহেব গত তিনদিন আগে নুরা পাগলা আমার হাসপাতালে আসে পেটের পিড়া নিয়ে। সবাই বিরক্ত করছিল বলে হাসপাতালের আয়া পাগলাকে ১টি বই হাতে দিয়ে বলেছিল, ৮৫ হাজার টাকা দামের বই, ৩৭ লাখ টাকা দামের জানালার পর্দা, ৭ হাজার টাকা দামের বালিশ যেন নষ্ট না করে। এসব জিনিসের দাম শুনে সে বার বার নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছিল। এসময় সে বাড়িতে ফোন করতে চাইলে হাসপাতালের নার্স তাকে টেলিফোন রিসিভার হাতে দিয়ে বলেছিল সাবধানে ধরবেন এ রিসিভারটির দাম কিন্তু ১৫ লাখ টাকা।

রিসিভারের দাম শুনে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। আমরা সকল রোগীকে সমান সেবা দিয়ে থাকি। ছোট বড় বিচার করি না। তাই সাথে সাথে নুরা পাগলাকে ২ কোটি টাকা দামের লিফটে তুলে দোতলায় নিয়ে যাই। লিফট থেকে নামিয়ে তাকে ৫২ লাখ টাকা দামের একটি এসি কেবিনে নিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার টাকার হেডকার্ডিয়াক স্টেথোস্কোপ দিয়ে হৃদস্পন্দন মেপে দিই। নুরা পাগলা বার বার লিফট, এসি আর ষ্টেথোমিটার দাম জানতে চাচ্ছিল। আমরা এগুলোর দাম বলতেই তার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়।

ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ায়, সাথে সাথে আমাদের ভিজিল্যান্স টিম এসে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকার ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন দিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করে ৩ লক্ষ টাকা দামের ল্যাপটপ থেকে রিপোর্ট বের করে পরীক্ষা করি। একটু সুস্থ্য হয়েই সে ল্যাপটপের দাম জানতে চায়। দাম বলার সাথে সাথে নুরা পাগলার হাপানী বেড়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে ডাক্তার দ্রুত ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্টের মাস্ক মুখে লাগিয়ে দিই।

একটু সুস্থ্য হলে হাসপাতালের ১২ লক্ষ টাকা দামের টেবিলে খাবার খেতে দিই। এ সময় নুরা পাগলা ৫০ হাজার টাকা দামের চেয়ারের উপর পা তুলে বসে মনে মনে চুরি ফন্দি আটে। আয়া এ সময় তার জন্য ১০ হাজার টাকা দামের বটি দিয়ে ফল কেটে, ১ হাজার টাকা দামের প্লেটে রেখে ১ হাজার টাকা দামের ১টি কাটাচামচ দিয়ে যায়। পরে সকালের নাস্তায় ১ হাজার টাকা দামের ১ হালি কলা, ১ হাজার টাকা দামের ১ হালি সেদ্ধ ডিম দিয়ে যায়। খাবার পরে উচ্ছিষ্ট ময়লা যাতে ১০ হাজার টাকা দামের ১ টি ছোট্ট ড্রামে রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক করে যায়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা শুনে ওসি সাহেব প্রায় অজ্ঞান। তার আওয়াজ শুনে ওসি সাহেব বললেন, এতো আপনার হাসপাতালের ইসতেহার বললেন কি চুরি করেছে তা তো বললেন না? আপনি বুঝতে পারেনটি কি চুরি করেছে? ওসি সাহেবকে প্রশ্ন করে কর্তৃপক্ষ বলতে লাগলেন, নুরা পাগলা সুস্থ্য হয়ে সবার চোখের আড়ালে ১টা বালিশ, ১টা বই, জানালার পর্দা, ১টি টেলিফোন রিসিভার, ১টি স্টেথোমিটার, ১টি এসি, ১টি ডিজিটাল ব্লাড পেশার মেশিন, ১টি এসি, ১টি ল্যাপটপ, বটি, কাটাচামিচ, ময়লার ড্রাম সহ সকালের নাস্তা নিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় নুরা পাগলা ৬১ লাখ টাকা দামের নারিকেল গাছের চারা, ৭ লাখ টাকা দামের কলা গাছ নিয়ে ৭ লাখ টাকার টিনের ঘরের ভেতর দিয়ে চলে গেছে বলেই ওসির দিকে তাকিয়ে দেখেন তিনি নেই। পানির আওয়াজ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখেন ওসি সাহেব ভ্যাসিনে গিয়ে কল ছেড়ে মাথায় পানি ঢালছেন।

(বিঃদ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ন কাল্পনিক। এ গল্পের চরিত্র, ঘটনা কিংবা কোন দামের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। তবুও যদি কোন কিছুর সাথে মিলে যায় তাহলে সেটা কাকতালীয়।)

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

আপনার মতামত জানান