গর্ভবতী নারীদের কভিড টিকা
করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে এক অজানা আশঙ্কায় বিশ্বের ফার্টিলিটি সোসাইটিগুলো নিঃসন্তান দম্পতিদের গর্ভধারণ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। শুধু এন্ডোমেট্রিওসিস, পুওর ওভারিয়ান রিজার্ভ ও কেমোথেরাপির আগে টিস্যু ফ্রিজিং কেসগুলো করার সুপারিশ ছিল। কারণ গর্ভধারণে মা ও অনাগত সন্তানের ওপর কভিডের প্রভাব ছিল অজানা।
ইংল্যান্ডের একটি বড় সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণকারী যেমন ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ (বিশেষ করে কালো চামড়া ও এশিয়ান) থাকলে করোনা আক্রান্তে মৃত্যুহার বেশি। এটা গর্ভবতী নন এমন নারীদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি ছাড়া সন্তানের ওপর তেমন কোনো প্রভাব নেই।
করোনা সংক্রমণের দীর্ঘসূত্রতা ও অসহনীয় ঝুঁকি নেই বলে পরবর্তী সময়ে গর্ভবতী নারীদেরও চিকিৎসা শুরু হয়। বাংলাদেশেও সে রকম গাইডলাইন ছিল। কিন্তু এখনকার করোনা ভেরিয়েন্ট আলাদা। গর্ভবতী মায়ের রিস্ক ফ্যাক্টর থাকুক বা না থাকুক কারোর করোনা সংক্রমণ হলে বেশ জটিলতার দিকে চলে যায়।
টিকার বিকল্প নেই
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। সে জন্য করোনা স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বেশ বলা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এখন শুধু নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাচ্ছে না। এ জন্য এখন বেশ জোরেশোরে কভিড ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। এর আসলে কোনো বিকল্প নেই। যত তাড়াতাড়ি মানুষ ভ্যাক্সিনেটেড হবে, ততই করোনা বিলুপ্তির সম্ভাবনা বাড়বে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী নারীরা কোন কম্পানির টিকা গ্রহণ করবেন? নাকি সব ধরনের টিকা নিতে পারবেন?
ফাইজার ও মডার্না
গর্ভবতী নারীদের ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছে বিশ্বের বড় ফার্টিলিটি সংস্থাগুলো। এ পর্যন্ত যাঁদের এই টিকা দেওয়া হয়েছে তাঁদের ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানদের কোনো জন্মগত ত্রুটি পাওয়া যায়নি। আমেরিকায় এক লাখের বেশি টিকাপ্রাপ্ত গর্ভবতী নারী ও তাঁদের সন্তানদের মধ্যেও কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যাপারে বলা হয়েছে, যেসব গর্ভবতী নারী কভিড সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তাঁরা নিতে পারবেন। যেমন স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সবাই।
অর্থাৎ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকলে এই টিকা নিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণ হয়নি এমন হবু মায়েদের এই টিকা দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর কোনো অসুবিধা পাওয়া যায়নি। এর মানে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে টিকা দিলেও অসুবিধা হয় না।
সিনোভ্যাক
এক ডোজ সিনোভ্যাক টিকা নেওয়ার পর কেউ গর্ভধারণ করলে যথাসময়ে পরবর্তী ডোজ নিতে হবে। এই টিকা গর্ভাবস্থার যেকোনো সময় নেওয়া যাবে, তবে ১৪ থেকে ৩৩ সপ্তাহের মধ্যে নেওয়ার সুপারিশ করেছে অনেক সংস্থা। অন্তত প্রথম ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত না দিতে পারলে ভালো। যাঁরা ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে (১২ সপ্তাহ) নিয়েছে, তাঁদের মধ্যেও কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। আরো সুখবর হলো, এই টিকা গ্রহণকারী নারীর ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের শরীরেও উল্লেখযোগ্য অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে; যা খুবই ইতিবাচক দিক।
করণীয়
বাংলাদেশে বর্তমানে করোনার উচ্চ সংক্রমণ চলছে বলে এই সময়ে কিছু ক্ষেত্রে সন্তান না নিলে বরং বেশি ভালো। অথবা টিকার সব ডোজ শেষ করে সন্তান নিলে ভালো হয়।
একটু বেশি সতর্কতার জন্য যা করণীয় তা হলো :
► ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, যাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে তাঁরা একটি কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
► যেসব বিবাহিত নারীদের বয়স ৩০ বছরের নিচে, তাঁরা আরো কিছুদিন জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে পারেন। অথবা দুই ডোজ টিকা দিয়ে সন্তান নিন।
► যেসব নারীর সন্তান না হওয়ার কারণ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) এবং যাঁদের বয়স ৩০ বছরের নিচে, তাঁরা এই কভিড সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। এই সময়ে ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল (ওসিপি) খেলে জন্মনিয়ন্ত্রণ হবে, পিসিওর সমস্যারও কিছু সমাধান হবে। তবে কেউ যদি অপেক্ষা করতে না চান তাহলে সন্তান নেওয়ার আগে টিকা নিয়ে নিন।
► আগে টিকা নিন, পরে সন্তান নিন। তবে গর্ভধারণ আগে হয়ে গেলে নিঃসংকোচে টিকা নিন।
► ব্রেস্টফিডিংয়ের সময়ও টিকা নেওয়া যাবে।
অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম, চিফ কনসালট্যান্ট, ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার লিমিটেড (আইসিআরসি)
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান