যেসব লক্ষণে বুঝবেন মস্তিষ্কে টিউমার

প্রকাশিত
ছবি: সংগৃহীত

মস্তিষ্কে টিউমার একটি জটিল রোগ। বর্তমানে এই রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। টিউমার সময়মতো অপসারণ করা না গেলে সেটি ক্যানসার রূপ নিতে পারে। হতে পারে ভয়াবহ বিপদ।

তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করা, অকারণে ঘুম ভেঙে যাওয়া, কারণ ছাড়াই হাত-পায়ে দুর্বলতা অনুভব করা কিংবা দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি কমে গেলে বুঝতে হবে মস্তিষ্কে কোনো জটিল সমস্যা রয়েছে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইটদিস ডটকম’র এক প্রতিবেদনে মস্কিষ্কে ক্যানসারের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। আসুন জেনে নিই সেই সম্পর্কে-

ভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা
মাথাব্যথা খুবই সাধারণ একাটি সমস্যা। কিন্তু এই পরিচিত সমস্যায় কোনো ভিন্নতা লক্ষ্য করলে সাবধান হতে হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট জনস ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ‘নিউরো-অনকোলজিস্ট’ ড. সান্তোস কেসারি বলেন, ‘ঘন ঘন মাথা ব্যথা হওয়া, ব্যথার ধরন ও তীব্রতা একেক সময় একেক রকম হলে স্নায়ুবিক পরীক্ষা করানো উচিত’।

এ ছাড়া লসঅ্যাঞ্জেলেসের স্বীকৃত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ জশুয়া মন্সুর বলেন, ‘সাধারণ মাথাব্যথায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ইঙ্গিত হবে জীবনের সবচাইতে তীব্র মাথাব্যথা। যার ইতোমধ্যে ‘মাইগ্রেন’ আছে তার কাছে এই মাথাব্যথা হবে অনেক দীর্ঘ সময়’।

 

মাথাব্যথায় ঘুম ভেঙে যাওয়া

‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স’-এর চেয়ারম্যান ও নিউরোসার্জন মার্টিন মোর্তাজাভি এ বিষয়ে বলেন, ‘মাথাব্যথা যদি আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়, তবে সেই মাথাব্যথ্যাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না’।

স্মৃতি হারিয়ে ফেলা

স্মৃতি হারিয়ে ফেলার বিষয়ে ডা. কেসারি বলেন, ‘ভুলে যাওয়া মন কিংবা সাময়িক স্মৃতি হারানো মস্তিষ্কের ‘টেম্পোরাল’ অথবা ‘ফ্রন্টাল লোব’য়ে টিউমারের ইঙ্গিত দেয়। আর এই দুটো অংশই স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। অনেকসময় দেখা যায়, টিউমার ধরা পড়ার কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছর আগে থেকেই রোগী এ সমস্যা অনুভব করেছেন। আর তাকে স্মৃতিভ্রংশ মনে করে অবহেলা করে গেছেন’।

অস্বাভাবিক বমিভাব ও বমি হওয়া
অস্বাভাবিকভাবে বমিভাব ও বমি হওয়া হতে পারে মস্তিষ্কে টিউমারের লক্ষণ। এ বিষয়ে ডা. মোর্তাজাভি বলেন, ‘বমিভাব কিংবা বমি হওয়া এমন একটা বিষয়, যা হঠাৎ করে বিনা কারণে হয় না। আর কেউ যদি তার হঠাৎ বমিভাব কিংবা বমি হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে না পায় তবে কারণটা হয়তো মস্তিষ্কে লুকিয়ে থাকা টিউমার’।

দুর্বলতা
ডা. কেসারি বলেন, ‘হাত-পায়ে কোনো কারণ ছাড়াই যদি দুর্বলতা অনুভূত হয়, তবে সেটি হতে পারে মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার ইঙ্গিত। বিশেষত ‘ফ্রন্টাল লোব মোটর করটেক্স’, ‘নিউরন’ এবং মস্তিষ্কের পেশি নিয়ন্ত্রক ‘পাথওয়ে’তে সেই টিউমারের দেখা পাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে’

ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
এ বিষয়ে ডা. কেসারি জানান, ‘মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ বদলে যেতে পারে। যে কাজে সে একসময় পটু ছিল, সেই কাজেই তার করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সারাজীবন করে আসা ঘরোয়া কাজগুলোতেও রোগী দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর এমন ইঙ্গিতের প্রেক্ষিতে টিউমার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ফ্রন্টাল লোব’য়ে খুঁজে পাওয়া যায়’।

দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন
ডা. কেসারি এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তির সমস্যা বেশ সুক্ষ্ম হয়। দেখা গেছে, বিভিন্ন জিনিসে ধাক্কা খাওয়ার কারণে শরীরের একপাশে ক্রমাগত তারা আঘাত পাচ্ছেন। আবার প্রায়শই যানবাহন চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন’।

কথা বলায় পরিবর্তন
মস্তিস্কে টিউমার হবার উপসর্গ হিসেবে কথা বলাতেও আসতে পারে পরিবর্তন। এক্ষেত্রে অনেকসময় কথা জড়িয়ে যায়, তোতলামি দেখা দেয়।

হাঁটতে অসুবিধা
হাঁটতে বিভিন্ন অসুবিধা হওয়াটাও হতে পারে মস্তিষ্কের টিউমারের ইঙ্গিত। ভারসাম্য হারানো, পা ফেলার সময় তাল হারিয়ে ফেলা, পায়ে দুর্বলতা কিংবা অবশভাব হতে পারে এমন ক্ষেত্রে।

শ্রবণশক্তি কমে আসা
হঠাৎ করে কানে কম শুনতে পেলে সেটি অবহেলা করা উচিত নয়। টিউমার হলে সেটি যদি মস্তিষ্কের অষ্টম ‘ক্রেনিয়াল নার্ভ’য়ের ক্ষতি করে তখন শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সূত্রঃ যুগান্তর

আপনার মতামত জানান