রায়হানুল একাই হত্যা করেন ভাই-ভাবি, ভাতিজা-ভাতিজিকে
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চারজনের গলাকেটে হত্যার ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি পুলিশ। একই সাথে নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রিমান্ডে থাকা রায়হানুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সন্ধ্যায় রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি।
তিনি জানান, নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পারিবারিক কোন্দলে তাদেরকে হত্যা করে সে। গত ৯-১০ মাস আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। এজন্য সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তার ভাবি সাবিনা খাতুন তাকে প্রায়ই গালমন্দ করতেন। এসব নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে সে ভাবি সাবিনা খাতুনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য সে ১৪ অক্টোবর রাতে ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড (পানীয়) কিনে আনে। রাতে ভাত খাওয়ার পর কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তার ভাবী ও ভাইপো ভাতিজিকে খেতে দেয়।
রাতে হত্যাকারী রায়হানুল তার বড় ভাইয়ের ঘরে থাকা টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিল। রাত দেড়টার দিকে বড়ভাই শাহিনুর রহমান নিজ মাছের ঘের থেকে বাড়ি এসে দেখে ছোটভাই রায়হানুল তার ঘরে (বড় ভাইয়ের ঘরে) বসে টিভি দেখছে। এ সময় বড় ভাই শাহিনুর তাকে রাত জেগে টিভি দেখার জন্য বকাঝকা করে। বড়ভাই তকে গালমন্দ করে বলে ‘তুই বিদ্যুৎ বিল দিস না, টিভি দেখছিস কেন।’ এর জবাবে রায়হানুল ভাইকে বলে ‘এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেব তুমি এই স্পিডটি খাও।’ বড়ভাই তখন তার দেওয়া স্পিডটি খায়। এরপর রাতের কোনো এক সময় সে ঘরের কার্নিস বেয়ে বড় ভাইয়ের ঘরের ছাদের উঠে যায়। পরে চিলে কোঠার (সিঁড়ির উপরের ছোট ঘর) দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে বড় ভাইকে জবাই করে হত্যা করে। এ সময় মাথায় খুন চড়ে যায় তার। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবিকেও একইভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সময় ভাবি চিৎকার দিলে ভাইপো-ভাতিজি জেগে ওঠে। তখন তাদেরকেও গলা কেটে হত্যা করে রায়হানুল। পরে সে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয়।
প্রেস ব্রিফিংকালে সিআইডি সাতক্ষীরা অফিসের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে মাহি ও মেয়ে তাসনিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের চার মাস বয়সী শিশু কন্যা মারিয়া।
আপনার মতামত জানান