৩২ নম্বরের বাড়ী ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ ২৬ বিশিষ্ট নাগরিকের
![](https://dailysonargaon.com/wp-content/uploads/2025/02/inbound3440217554379656335.jpg)
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “গত ৫ ফেব্রুয়ারি যেভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ীটি ক্রেন, বুলডেজার ব্যবহার করে নির্মমভাবে ধুলিসাৎ করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অন্য আরো যে সকল স্থাপনা পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে যে নির্মমতার সাথে ধ্বংস করা হয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তা দেখে একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।”
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহম্মদ, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ও খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভীন হাসান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ।
আরো স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জোবাইদা নাসরীন ও মোহম্মদ সেলিম হোসেন, দিনাজপুরের সিডিএ পরিচালক শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, মানবাধিকার কর্মী সাঈদ আহমেদ, আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, আশরাফ আলী, শাহাদত আলম, রেজাউল হক, গবেষক ও আদিবাসী অধিকার কর্মী হানা শামস আহমেদ ও মানবাধিকার কর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ”ঘটনাটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারও আমরা জানাতে চাই। কিন্তু কার কাছে জানাব? আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলি হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে কিংবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু কেন? তাদের জনগণের ট্যাক্স ও অর্থে লালন-পালন করা হয় কি নীরব দর্শক হয়ে, নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্যে?”
”৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তবর্তী সরকারের উপরেই অনেকাংশে বর্তায়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যে কোনো দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শণ, স্থান কিংবা কোন স্থাপনা সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব সেই দেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাড়ি বা অন্য কোন স্থাপনা- ঐ স্থানে কারা কোন সময় বসবাস করেছেন বা কাদের নাম জড়িত সেই নিরিখে বিচার্য নয়।”
”…….অনেক নির্মম নির্দয় শাসকের বাসভবনও দর্শকরা তাই দেখতে পান, তাদের কীর্তি-অপকীর্তি সম্পর্কেও বহু শত বছর পরও মানুষ জানতে পারেন। আমরা তাই ৫ ও ৬ ই ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য অন্তবর্তী সরকারের কাছে সবিস্তারে ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও এর জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলাসহ যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতা ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি,” বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
”একই সাথে আমরা বলতে চাই, ৩২ নম্বর, ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ি ভাঙার সঙ্গে স্বৈরচার বা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শনের কোনই সম্পর্ক নেই। বরং এটা এক ধরনের গণ উত্তেজক সন্ত্রাসের প্রদর্শন বলেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। যা ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ভাবমূর্তিকেই ম্লান করে দেয়,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আপনার মতামত জানান