হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীন পাখি ডাহুক
ডেইলি সোনারগাঁ,>>
আমরা যারা বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল মেঠো পথের সবুজে ঘেরা গ্রামীণপ্রকৃতির মাঝে বসবাস করি তারা জল ও জঙ্গল থেকে অনন্ত সুন্দর এক পাখির কোয়াক কোয়াক ডাক শুনতে পাই। আমাদের অতি পরিচিত সেই ডাহুক পাখির কথা বলছি। অঞ্চল ভিত্তিক একে ডাইক ও পানপায়রা নামেও অনেকে চিনে। ডাহুকের বৈজ্ঞানিক নাম (Amaurorins phoenicurus) যার অর্থ লাললেজী কালো পাখি। ডাহুকের ঠোটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট্ট দাগ আছে এবং লেজের নিচের অংশে লালচে আভা আছে। ডাহুকের পিঠের রঙ ধূসর থেকে খয়েরী-কালো, মাথা ও বুক সাদা। পা লম্বা। পায়ের আঙ্গুলও বেশ লম্বা। দেখতে খুব সুন্দর জলের পাখিটি খুব ভীরু হলেও অন্যসব ঝিল্লির তুলনায় এরা বেশ সাহসী। কারন মানুষের আশেপাশে এদের বসবাস।
প্রজননকালীন সময়ে বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে এরা উচ্চস্বরে বারবার ডাকে। মাটিতে , পানা পুকুরের লম্বা কচুরি পানা ও ঝোপের তলায় এরা বাসা তৈরি করে। ফিকে হলুদ বা গোলাপী মেশানো সাদা রঙের ৬-৭ টি ডিম পাড়ে। তা দেয়ার ১৪ দিন পর যখন, ডিম ফুটে চিকচিকে কালো বাচ্চারা মা ডাহুকের পিছন পিছন সাঁতার কাটে, তখন এত সুন্দর লাগে যা দেখলে মন প্রফুল্ল হয়ে যায়। বাচ্চাগুলোকে ধরে আদর করতে খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু অত্যন্ত সতর্ক ডাহুক ও বাচ্চাদের ধরা সহজ নয়। মানুষ, সাপ কিংবা অন্য কোন প্রানীর অস্তিত্বের গন্ধ পেলে খুব দ্রুত পালিয়ে যেতে এরা ওস্তাদ। কিন্তু এত সতর্ক থাকা সত্বেও বিপদমুক্ত নয়। ডাহুক-ডিম-বাচ্চা সবই সাপ ও গুই সাপের অত্যন্ত প্রিয় খাবার।
এ তো সাপের কথা। পাখা থাকা সত্বেও এরা ১মিটারের বেশী উড়তে পারে না। তাই শীত কালে গ্রাম্যশিশুদের বনভোজনে (জোলাবাতি) সুস্বাদু মাংসের প্রধান জোগান দেয় ডাহুক। একদল বালক মিলে তারা করলে ডাহুক প্রথম উড়ালে সর্ব্বোচ্চ ১-২ মিটার যেতে পারলেও তৃতীয়বারের পর আর উড়তে পারে না। আশে পাশের জঙ্গলে কিংবা ঝোপে গিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ছেলেরা খুজে খুজে অবশেষে বনভোজনে ঠিকই মাংসের ব্যবস্থা করে ফেলে।
বিপন্নপ্রায় পাখির মাঝে ডাহুকের নাম অন্তভুক্ত হয়েছে। আই ইউ সি এন (আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ) এই প্রজাতিটিকে নূন্যতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষনা করেছে
আপনার মতামত জানান