সোনারগাঁয়ে ইফা’র আল আমিনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত

ডেইলি সোনারগাঁ >>
সোনারগাঁ উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ফিল্ড অফিসার আল আমিনের ঘুষ বানিজ্য, দুর্ণীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কয়েকজন ইমাম লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রকল্প পরিচালকের কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক জাকির হোসেন তদন্ত করছেন। গণমাধ্যম প্রতিনিধি পরিচয়ে লাগামহীন দূনীর্তি ও কোটি টাকার বানিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগ আসছে বার বার। মিডিয়ার সাথে জড়িত থাকার কারনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা তার অপকর্মের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেন না বলেও জানা যায়। এদিকে, মসজিদের ইমাম, শিশু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী তার হাতে জিম্মি রয়েছে বলেও অভিযোগ করেেছন ভুক্তভোগীরা।

সুত্র জানায়, এ বছরের আগষ্ট মাসের ৪ তারিখ সোনারগাঁ উপজেলার কেয়ার টেকার শাহাদাত আমীন, নুরুল আলম শাহ্জাহান, আব্দুল বাতেন বিল্লাহ, শেখ ফরিদ, কেএম কাউছার আহমেদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালকের বরাবরে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেন। আল আমিন যাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহন করেছেন এমন ১৬ জনের নাম, কেন্দ্রের নাম, টাকার পরিমান ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত একটি তালিকাও তারা সংযুক্ত করেন। ভূক্তভোগিরা হলেন, আবুল হোসেন, মাওলানা এমদাদুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন, আখতার হোসেন, সুমন, সাজিদুল ইসলাম, শাহ জালাল, ইসমাইল হোসেন, আতা উল্ল্যাহ, খালিদ সাইফুল্লাহ, সোনিয়া, লিমা, সামসুল হক, নজরুল ইসলাম, শামীম মাহমুদী ও সালাহ উদ্দিন। তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ২১২ জন শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে অর্থ গ্রহন এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি ও জাল সনদ তৈরীর অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
আল-আমিন সোনারগাঁ উপজেলার সম্ভুপুরা ইউনিয়নের দূর্গা প্রসাদ গ্রামের আল হাক্কুর ছেলে। তিনি ২০১২ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপার ভাইজার হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়ার বাড়ির মসজিদ নানাখি গ্রামের পেশ ইমাম হিসেবে কাজ করেছেন। সরকারি চাকুরিরত অবস্থায় তিনি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলাভিশন টেলিভিশন ও স্থানীয় একটি পত্রিকার সোনারগাঁ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে সরকারের বরাদ্দ বাস্তবায়িত না হয়ে হরিলুট চলছে বলে জানা যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিল্ড সুপার ভাইজারদের মাধ্যমে সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফাউন্ডেশনের কর্ম প্রকল্প, মসজিদ ভিত্তিক সহজ কোরআন শিক্ষা, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষার নামে ইমামদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন শাখায় চাকরী দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেয় সে। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকার ইমামদের সম্মানী বাতা তুলতে গিয়েও কয়েক দফায় অসাধু ফিল্ড সুপারভাইজারগণ আর্থিক সুবিধা আদায় করে নেন। কখনও কখনও তারা অর্ধেক টাকায় ইমামদের কাছ থেকে চেক কিনে থাকেন বলেও জানা যায়। প্রতিটি প্রক্রিয়ার সোনারগাঁয়ের ২১২ জন ইমাম জিম্মি রয়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করেন। কোন ইমাম মসজিদ ছেড়ে চলে গেলে সেই তথ্য গোপন রাখা হয়। পরে সরকারের বরাদ্দ করা অর্থ ফিল্ড সুপারভাইজাররা উত্তোলন করে থাকেন। কখনও সেই বদলে যাওয়া ইমামগনও তাদের সাথে জড়িত থাকেন। ফলে সরকারের বরাদ্দের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি আর অনিয়মের কবলে পড়ে।

নানা দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগে ২০১৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে সোনারগাঁ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলী করা হয়। কিন্তু মিডিয়া ও আধিপত্য বিস্তার করে মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি ফের আড়াইহাজারে বদলী হয়ে আসেন। পরে ২০১৮ সালে ফের সোনারগাঁয়ে বদলী করিয়ে নেন নিজেকে। এ কাজে তিনি মিডিয়ার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন মহলকে ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় স্বনামধন্য মিডিয়াাকে ব্যবহার করে মানুষকে করা হয় হয়রানি। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গেলেই প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমরা কারো দায় দায়িত্ব নিবো না। আপনারা যে অভিযোগ পেয়েছেন সংবাদ পরিবেশন করুন। আপনাকে ধন্যবাদ সত্য জানানোর জন্য।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামের সাথে যোগাযোগ করা হলে, আল আমিন তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নয় বলে নিশ্চিত করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন জানান, মন্ত্রণালয় থেকে ফিল্ড কর্মকর্তা আল আমিনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত করার নির্দেশ এ সপ্তাহে এসেছে। শিগ্রই তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপার ভাইজার আল আমিন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

আপনার মতামত জানান