শুধুমাত্র নারীদের জন্য কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশিত

দেশে বউবাজার নামে বেশ কয়েকটি হাট বা বাজার রয়েছে। আবার বউমেলাও হয়। এসব স্থানে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই নারী।


তবে এমন কোরবানির পশুর হাট কোথাও নেই, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই নারী। তবে পাকিস্তানে এবার ঈদুল আজহায় শুধুই নারীদের জন্য কোরবানির পশুর হাট বসেছে। সেখানে গবাদিপশুর ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই নারী। পাকিস্তানের মতো একটি রক্ষণশীল দেশে এমন দৃশ্য সত্যিই অবাক করার মতো!

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর করাচির শাদমান টাউনের একটি পশুর হাট। এখানে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পশু বেচাকেনা করছেন। এবারই প্রথম পাকিস্তানে এমন কোনো কোরবানির পশুর হাট বসেছে। আয়োজকেরা বলছেন, বিশ্বেও এটি প্রথম।

আল্লাহর প্রতি নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা হিসেবে শিশুসন্তান ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি দিতে উদ্যত হওয়ার ঘটনার স্মরণে সারা বিশ্বের মুসলমানেরা আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।

কোরবানির ঈদের কাছাকাছি সময় থেকেই জমে উঠেছে করাচির সেই পশুর হাট। কোরবানির পশু কেনার জন্য ভিড় করছেন নারীরা।

এ নিয়ে আরব নিউজ একটি প্রতিবেদন করেছে। বাজারের সংগঠক রুকাইয়া ফরিদ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘নারীদের জন্য এমন কোনো বাজার তৈরি করা হয়নি, যেখানে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে পশু বিক্রি করতে পারেন। বিশ্বে এই প্রথম নারীদের জন্য গরুর হাট বসানো হলো। এটি এমন নারীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, যাঁদের বাড়িতে সহযোগিতার জন্য সক্ষম কোনো পুরুষ নেই। তাঁদের বাবা বা ভাই দেশের বাইরে থাকেন। তাঁরা ত্যাগের সম্মান থেকে বঞ্চিত।’

রুকাইয়া ফরিদ আরও বলেন, ‘এই বাজার সেই নারীদের জন্যও, যাঁরা গ্রামে সারা বছর পশু পালন করেন। কিন্তু এটি থেকে তাঁরা নিজেরা সরাসরি উপকৃত হন না। উপকৃত হন তাঁদের স্বামী, বাবা বা ভাই। তাঁদের পশুও এখানে আনা হয়েছে।’

রুকাইয়া জানান, এই হাটে এমন কিছু বিক্রেতা আছেন, যাঁরা বাড়ির ছাদে বা বাড়ির সামনের সবজিবাগানে পশু পালন করেন। কেউ কেউ আবার স্বামীর ব্যবসায় সহায়তা করছেন।

কোরবানির পশুগুলো আসছে পাঞ্জাব ও করাচি থেকে। প্রথমবার হওয়ায় অবশ্য বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা কম—মাত্র ১০টি স্টল রয়েছে। সেখান থেকে নারী ক্রেতারা দর কষাকষি করে পশু কিনছেন।

পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাব। সেখানকার একটি গবাদিপশুর খামারের মালিক রুকাইয়া ফরিদ বলেন, ‘আমরা খুব ন্যায্য দাম রাখছি। নারীরা এখানে বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, বাজারের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তিনি সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জারসের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন।

নূরজাহান নামে একজন বিক্রেতা জানান, স্টল খোলার পর প্রথম সপ্তাহে তিনি চারটি ছাগল বিক্রি করেছেন। তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমি পশুপাখি ভালোবাসি। সারা বছর ছাগল পালন করি। ঈদুল আজহায় সেগুলো বিক্রি করি।’ নূরজাহান বলেন, ‘নারীরা আগ্রহ নিয়ে এখানে আসছেন। আমি তাঁদের বিশেষ ছাড় দিচ্ছি।’

নূরজাহানকে এ সময় বাজারে গবাদিপশুর স্টল দেওয়া অন্য নারী বিক্রেতাদের কেনাবেচায় একটু দিলখোলা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, ‘যে নারীরা এটিকে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে নিতে চান, তাঁরা প্রচুর মুনাফা করতে পারেন।’

আশি কানওয়াল নামে এক নারী বলেন, বাজারে গিয়ে তিনি ন্যায্য দামে পছন্দের একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন এই বাজারটা সম্পর্কে শুনি, আমার ছেলে আমাকে তার সঙ্গে যেতে বলেছিল। কারণ ওর বাবার হাটে যাওয়ার সময় নেই। তাই আমি এসেছি। এখানে ঘুরে ঘুরে দেখেছি। একটা পশু কিনেছি।’ কানওয়াল বলেন, শাদমানের বাজারে যাওয়ার রাস্তাটি অন্য বাজারের চেয়ে অনেক সহজ।

করাচির প্রধান গবাদিপশুর বাজারের কথা উল্লেখ করে কানওয়াল বলেন, ‘আমরা সোহরাব গোট বা অন্যান্য গবাদিপশুর বাজারে গেলে একা যেতে পারি না। নারী হিসেবে সেটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক নয়। তবে এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। পরিবেশ ভালো এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ভালো। আমি হয়তো আগামী বছরও আসব।’

আপনার মতামত জানান