শামীম-খালেদ বিপুল সম্পদের সন্ধান

প্রকাশিত

ক্যাসিনো বাণিজ্যের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, সেলিম প্রধান, ও কাউন্সিলর পাগলা মিজান এবং এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভুইয়ার বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। এসব ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানি লন্ডারিং আইনের মামলাগুলোর দ্রুতই চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রভাবশালী নেতা (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন সম্রাটেরও দেশে ও দেশের বাইরে বিপুল সম্পদের তথ্য পাচ্ছে সিআইডি। সম্পদের পুরো তথ্য নিশ্চিত হয়ে দ্রুতই তাঁর বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মানি লন্ডারিং আইনে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাগুলো থানা-পুলিশ থেকে সিআইডিতে স্থানান্তর হয়। সিআইডি তদন্তে নেমে উল্লিখিত ছয়জনসহ মোট ১৩ আসামির সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দেয়। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সম্পদের তথ্য সিআইডির হাতে এসেছে।

সিআইডির প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উল্লিখিত ছয়জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ জি কে শামীমের। এফডিআরসহ ১৯৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তাঁর ৩২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্পদের পরিমাণে এর পরের অবস্থানেই আছেন খালেদ মাহমুদ ভুইয়া। তাঁর ৫২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। তাতে ৪১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা লেনদেনের হিসাব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ২৭৮ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। ব্যাংকে স্থিতি রয়েছে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গ্রেপ্তারের সময় জব্দ করা হয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। বিদেশি মুদ্রা ছিল সাত লাখ ৬৪ হাজার টাকার।

এনামুল হক এনু ও রূপন ভুইয়ার সম্পদের মধ্যে জমিসহ ২০টি বাড়ির সন্ধান মিলেছে। তাঁদের ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, তাতে ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এর বাইরে এই দুই সহোদরের তিনটি প্রাইভেট কার ও তিনটি মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে।

সেলিম প্রধানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৮৩টি। তাঁর সম্পদের মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ডে বাগানবাড়ি, ঢাকায় প্রধান স্পা হাউস, প্রধান ল ফার্ম, প্রধান ফ্যাশন হাউস হোয়াইট হাউস, ফিশিং কম্পানি, প্রিন্টিং প্রেস ও ১২টি গাড়ি।

মোহাম্মদপুরের কাউন্সিলর পাগলা মিজানের সম্পদের মধ্যে রয়েছ বছিলা রোডে একটি মার্কেট ও চারটি ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে পাঁচটি বাড়ি এবং মোহাম্মদপুর আওরঙ্গজেব রোডে ২২০০ বর্গফুটের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট।

সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল বুধবার জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনসহ ছয়জনের বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসেই তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানি লন্ডারিং আইনের মামলাগুলোর চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। প্রথমেই গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভুইয়াকে। দুই দিন পর গ্রেপ্তার হন যুবলীগ নেতা দাবিদার জি কে শামীম। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় কাউন্সিলর পাগলা মিজানকে। গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভুইয়া পালিয়ে গেলেও তাঁদের বাসা থেকে জব্দ করা হয় পাঁচ কোটি টাকা ও আট কেজি সোনা। এসব ঘটনায় থানায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়। পরে সেগুলো সিআইডিতে স্থানান্তর হয়।

আপনার মতামত জানান