র‌্যাব-বিজিবির পোশাকে টিকটক, গ্রেপ্তার

প্রকাশিত

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ল্যান্স নায়েক হিসেবে পরিচয় দিতেন রাজ ওরফে আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন (২৬)। প্রচার করতেন প্রেষণে বিজিবি থেকে এলিট ফোর্স র‌্যাবে নিযুক্ত তিনি। আর র‌্যাবের ইউনিফর্ম পরেই তিনি তৈরি করতেন টিকটক ভিডিও। টিকটক ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করেন চারটি। শুধু তাই নয়, শতাধিক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরির পর করেছেন প্রতারণাও।

র‌্যাব বলছে, বিজিবি কিংবা র‌্যাবের সদস্য নন তিনি। টিকটকার রাজ পেশায় বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু র‍্যাবের ইউনিফর্ম পরে টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন তিনি। এসব ভিডিওতে নিজেকে র‌্যাব সদস্য বলে পরিচয় দিতেন তিনি। এ পরিচয়ে শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন রাজ।

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে টিকটক রাজ ওরফে আব্দুর রাকিব ওরফে খোকনকে (২৬) গ্রেফতার করে র‍্যাবের একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে র‍্যাবের ইউনিফর্ম, প্রতারণায় কাজে ব্যবহৃত মোবাইল, সিম ও বাঁশি জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক সেলিব্রিটি বানানোর নামে বিভিন্ন দেশে নারীপাচার চক্রের মূলহোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি, ম্যাডাম সাহিদা ও টিকটক হৃদয় বাবু সহযোগী অনিকসহ বেশ কয়েকটি নারী পাচার চক্রের ৬৬ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার র‍্যাব-২ ও ৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে টিকটকার রাজকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি টিকটক ভিডিও প্রচারে নিজেকে র‍্যাবের সদস্য পরিচয় দিতেন। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি, ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাৎ করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিকটকার রাজ পেশায় বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু র‍্যাবের ইউনিফর্ম পরে নিজেকে র‍্যাব-৫ এ কর্মরত হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। গত দুই বছর ধরে তিনি টিকটক, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটস-অ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে র‍্যাবের পরিচয় দিতেন। টিকটকে রাজের ২ মিলিয়নের অধিক ভিউ ও দেড় মিলিয়ন ফলোওয়ার রয়েছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নিজেকে উচ্চবিত্ত পরিচয় দিতেন। এ পরিচয় সত্য প্রমাণিত করতে বিভিন্ন বাড়ির সামনে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিসের সামনে গিয়ে ভিডিও তৈরি ও প্রচার করতেন তিনি।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, রাজ টিকটকে নারীদের মধ্য থেকে যারা দামি অলংকার পরিধান করতেন ও যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাদের টার্গেট করতেন। এরপর তাদের বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে প্রতারণার মাধ্যমে হার, অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

রাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, আগে গার্মেন্টসে কাজ করলেও বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে গত দেড় বছরে র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনটি বিয়ে করেছেন এবং শতাধিক মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক তৈরি সম্পর্ক করে প্রতারণা করেছেন রাজ। তিনি কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর চিত্র (ছবি) ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করতেন। পরবর্তীতে ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, সম্প্রতি টিকটকার রাজ র‍্যাব-৫ থেকে ঢাকায় র‍্যাব-২ বদলি হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে জানায়। ঢাকায় এসে তার আরও ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে তার আগেই রাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আপনার মতামত জানান