ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা

প্রকাশিত


কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্রসিং–ত্রুটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রেনের পেছন দিকে ধাক্কা দেওয়ার কারণে মালবাহী ট্রেনের লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ডকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় ও প্রধান কর্মকর্তা পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল প্রশাসন। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এছাড়া ঢাকা থে‌কে উদ্ধারকারী রি‌লিফ ট্রেন ভৈরবে পৌঁছেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আন্তনগর এগারোসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ থেকে বেলা ৩টার দিকে ছেড়ে ভৈরব স্টেশনের ৩ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এরপর সেখানে ট্রেনটির ইঞ্জিন ঘোরানো হয়। তার আধঘণ্টা পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ভৈরব স্টেশন ছাড়ে। ঢাকার দিকে যেতে ৩ নম্বর লাইনকে ক্রস করে ১ নম্বর লাইন দিয়ে যেতে সিগন্যাল দেওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে পেছনের দুটি বগি ছাড়া বাকি বগিগুলো ক্রস পয়েন্ট অতিক্রম করে।


তখন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি ২ নম্বর লাইন দিয়ে আসছিল। মালবাহী ট্রেনটিও স্টেশনের ১ নম্বর লাইনে প্রবেশের সিগন্যাল পায় এবং ক্রস পয়েন্ট সেইভাবে প্রস্তুত ছিল। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের শেষে দুই বগি ক্রস করার সময় মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনটি ক্রস পয়েন্ট ঢোকে। তখনই এগারোসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিকে ধাক্কা দেয়। এতে পেছনের দুটি বগি লাইন থেকে ছিটকে উল্টে যায়। বেশ কয়েকজন যাত্রী বগি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে যান। বগির ভেতরে যাত্রীরা একজন অপরজনের অপর চাপা পড়েন। দুর্ঘটনার পর উভয় ট্রেনের চালক পালিয়ে যান। গা ঢাকা দেন স্টেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মরতরাও। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের অংশ খুলে পড়ে যায়।


উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ, র‍্যাব, জেলা পুলিশ ও বিজিবি
ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে ঢাকা থেকে যাওয়া বিশেষ উদ্ধারকারী দল, রেলওয়ে পুলিশ, র‍্যাব, জেলা পুলিশ ও বিজিবি।

এই দুর্ঘটনার ফলে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ-চট্রগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাপরিচালকের কার্যালয় সূত্র বলছে, ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত রেলে দুর্ঘটনায় শতাধিক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১০ সালে নরসিংদীতে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর ‘মহানগর গোধূলি’ ও ঢাকাগামী মেইল ‘চট্টলা’ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১২ জন নিহত হন। ২০১৪ সালে ১৪৭ দুর্ঘটনায় মারা যান ১৯ জন। ২০১৫ সালে ৮৮টি রেল দুর্ঘটনায় মারা যান ১৫ জন।

আপনার মতামত জানান