ভাঙতেই হবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অবৈধ হোটেল-মোটেল

প্রকাশিত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলীতে যে সমস্ত অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মেও জন্য সমুদ্র তীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকারকে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন করে কাউকে যাতে সমুদ্র তীর লিজ দেওয়া না হয় সে বিষয়ে সরকারকে নজর রাখতে হবে।

এই স্থাপনাগুলো ১৯৯৯ সালের পর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত লিঝ দেওয়া হয়। এই লিজ আইন সম্মত হয়নি বলে রায়ে বলা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই রায় দিয়েছিলেন। এক বছর পর রায়টি প্রকাশ করা হয়। রায়ে বলা হয়েছে, স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত এলাকা পরিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন (গেজেট) জারি করে। ওই গেজেট অমান্য করে ওইসব জায়গায় স্থাপনা তৈরি করতে লিজ দেওয়া হয়। এরপর সেখানে গড়ে ওঠে শত শত স্থাপনা। সৈকতের ঝিলেনজা মৌজায় ২০টিরও বেশি থ্রি স্টার ও ফাইভ স্টার মানের হোটেল, ছোটে বড় আরও হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠে। পরিবেশ বিপন্ন হয় এই কারণ দেখিয়ে ২০১০ সালে লিজগুলো বাতিল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি রিট আবেদন করেন হোটেল মালিকরা।

২০১০ সালে ২২ জুলাই হাইকোর্ট রিটগুলো এক সঙ্গে নিষ্পত্তি করে রায় দেন। রায়ে সমুদ্র সৈকতের ওই স্থানের বিভিন্ন জায়গা লিজ দেওয়াকে বেআইনি ঘোষণা করে সেখানকার স্থাপনাকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। সেখানকার স্থাপনা নির্মাণকারী কয়েকজন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন। আপিল বিভাগ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন। এতে হাইকোর্টর আদেশ বহাল থাকে। এরপর আপিল বিভাগের ও রায় সংশোধনের জন্য রিভিউ আবেদন করা হয়। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদনও খারিজ করা হয়।

রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়া এবং পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর, সমুদ্র সৈকতের ওই অংমে আর কোনো স্থাপনা রাখা যাবে না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার ঝিলংজা মৌজায় লাবনী পযেন্ট থেকে কলাতলী মৌজায় যেসব হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে তা গুড়িয়ে দিতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় মানতে হবে। এই রায় মানা না হলে আদালত অবমাননা হবে। তবে হোটেল মালিকদের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরানুল কবীর বলেন, তারা রায়ে অসন্তুষ্ট। এ রায় কার্যকর হলে কক্সবাজারের পর্যটন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কমে যাবে পর্যটক।

আপিল বিভাগ রায়ে বলেন, কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম, সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটর দীর্ঘ এই সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধরে রাখা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জরুরি। এটা ঠিক যে, বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে স্থাপনা তৈরি করেছেন। কিন্তু প্রকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করা ঠিক হবে না। সৈকতের আগের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সেগুলো ধ্বংস করতেই হবে।

আপনার মতামত জানান