প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ডিজেল তৈরি করছেন ছয়জন উদ্যোক্তা

প্রকাশিত


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকায় প্লাস্টিক বর্জ্য গলিয়ে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন করছেন উপজেলার ভায়াবহ গ্রামের ছয়জন উদ্যোক্তা। প্রতি ৩০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য গলিয়ে তাঁরা প্রায় ১৪০ লিটার ডিজেল ও ১০ লিটার পেট্রল পাচ্ছেন। সরকারের অনুমতি ও সহায়তা পেলে কারখানাটি বড় করার ইচ্ছা তাঁদের।

জানা যায়, ছয় উদ্যোক্তার একজন বিল্লাল হোসেন ইউটিউব দেখে বছর তিনেক আগে প্লাস্টিক গলিয়ে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদনে উদ্যোগী হন।


সেই লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্রাকৃতির মেশিনপত্র তৈরি করে নিজ বাড়িতে পরীক্ষা শুরু করেন। পরীক্ষা সফল হলে তিনি স্থানীয় মোস্তফা কামাল, রামপ্রসাদ, আশরাফুল আলম, রফিকুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁরা ছয়জন মিলে মাস তিনেক আগে ভালুকা-মল্লিকবাড়ী সড়কের পাশে সামান্য জমি ভাড়া নেন। প্রায় আট লাখ টাকা বিনিয়োগে সেখানে দুটি বয়লার এবং একাধিক সিলিন্ডার বসিয়ে ছোট আকারে গড়ে তোলেন ‘বন্ধন’ নামে তেল ও পেট্রল উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান।

উদ্যোক্তারা জানান, তাঁরা বিভিন্ন কারখানা, টোকাই ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে গড়ে ২০ টাকা কেজি দরে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। পরে বর্জ্যগুলো ছোট করে কেটে বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি বয়লারে ঢোকান এবং বেশ কিছু নাট দিয়ে শক্ত করে বয়লারের মুখ লাগিয়ে দেন। নিচে আগুন ধরিয়ে দিলে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো গলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরি হয়।

পরে ওই বায়োগ্যাস তাঁরা প্লাস্টিক গলানোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। এতে তাঁদের জ্বালানি সাশ্রয় হয়। প্রথম ধাপে বয়লারে প্লাস্টিক গলে ‘গাদ’ তৈরি হয়। দ্বিতীয় দফায় ওই গাদ গলানো হলে তা থেকে প্রথমে পেট্রল ও পরে ডিজেল বের হয়ে আসে। তবে বের হয়ে আসা পেট্রল আরো দুই দফায় রিফাইন করলে তা মোটসাইকেলে ব্যবহারের উপযোগী হয়।
বিল্লাল হোসেনের দাবি, তাঁদের এই তেল উৎপাদনপ্রক্রিয়া পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। বরং পরিবেশের জন্য উপকারী। কারণ তাঁরা পরিবেশ বিনষ্টকারী প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এতে পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে। তাঁদের প্লাস্টিক গলানোর কাজে ধোঁয়া হয় না। কারণ তাঁরা প্লাস্টিক গলানোর সময় সৃষ্ট গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁদের তৈরি ডিজেল বর্তমানে শ্যালো মেশিনে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পাইকাররা এসে পেট্রল কিনে নিচ্ছে। তাঁরা প্রতি লিটার ডিজেল ৯০ টাকা এবং পেট্রল ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। রামপ্রসাদ জানান, তাঁরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন। পরিবেশের লোকজন তাঁদের কারখানা ঘুরে দেখে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সরকারের অনুমতি এবং সহযোগিতা পেলে কারখানাটি বড় করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের। তা ছাড়া এখানে উৎপাদিত ডিজেল, পেট্রল অধিকতর পরিশোধনের জন্য সরকারের কাছে প্রযুক্তিগত সহায়তাও চান উদ্যোক্তারা।

মল্লিকবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকরাম হোসাইন বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ডিজেল, পেট্রল উৎপাদন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহাম্মেদ বলেন, ‘প্লাস্টিক গলিয়ে ডিজেল উৎপাদনের উদ্যোক্তারা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাঁদের সরকারি অনুদান পাওয়ার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছি।’

আপনার মতামত জানান