প্রিয় নবীজির জীবনের শেষ কাজগুলো

প্রকাশিত



মহানবী (সা.) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে শেষবারের মতো করেছেন এমন কিছু কাজের বর্ণনা দেওয়া হলো—

১. শেষ ইমামতি : উম্মুল ফাদল বিনতে হারিস (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে মাগরিবের নামাজে সুরা ‘ওয়াল মুরসালাতি উরফা’ পাঠ করতে শুনেছি। তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রুহ কবজ করা পর্যন্ত তিনি আমাদের নিয়ে আর কোনো সালাত আদায় করেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪২৯)

২. শেষ বৈঠক : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, নবী (সা.) মিম্বারে আরোহণ করলেন। এটা ছিল তাঁর জীবনের শেষ বৈঠক।

তিনি বসে ছিলেন, তাঁর দুই কাঁধের ওপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, হে লোকসকল! তোমরা আমার কাছে এসো। লোকজন তাঁর কাছে একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, …শুনে রাখো, এই আনসার গোত্র সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের কোনো বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই আনসারদের সেলাকদের ভালো কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো মাফ করে দেয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯২৭)

৩. শেষবার মসজিদে গমন : আয়েশা (রা.) অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.)-কে লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। ইতিমধ্যে আল্লাহর রাসুল (সা.) একটু সুস্থতা বোধ করলেন এবং নামাজের জন্য বেরিয়ে এলেন। তখন আবু বকর (রা.) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তিনি নবী (সা.)-কে দেখে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নবী (সা.) তাঁকে ইঙ্গিত করলেন যে, যেভাবে আছ সেভাবেই থাকো। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.)-এর বরাবর তাঁর পাশে বসে গেলেন। তখন আবু বকর (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করে নামাজ আদায় করছিলেন আর লোকেরা আবু বকর (রা.)-কে অনুসরণ করে নামাজ আদায় করছিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮৩)

সিরাত গবেষকরা বলেন, এটা ১০ রবিউল আউয়ালের ঘটনা এবং এটাই ছিল মহানবী (সা.)-এর শেষবার মসজিদে গমন। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ২/৩১৯)

৪. সাহাবিদের কাছ থেকে শেষ বিদায় : উল্লিখিত নামাজের পর নবীজি (সা.) উসামা (রা.)-এর কাঁধে ভর করে দাঁড়ালেন এবং মিম্বারে উঠে বসলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাকে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন; কেউ ইচ্ছা করলে পার্থিব নিয়ামতেই সন্তুষ্ট থাকবে, আর কেউ ইচ্ছা করলে আল্লাহর কাছে থাকা নিয়ামতগুলো গ্রহণ করবে। সুতরাং এই বান্দা আল্লাহর কাছে বিদ্যমান নিয়ামতকেই পছন্দ করেছে। এই কথা শুনে আবু বকর (রা.) কেঁদে উঠলেন। কেননা তিনি বুঝতে পারলেন এটা পরোক্ষভাবে মহানবী (সা.)-এর বিদায় গ্রহণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আবু বকর তুমি কেঁদো না। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ২/৩২০)

৫. মেয়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় : আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) মৃত্যুর সময় ফাতিমা (রা.)-কে ডেকে আনলেন এবং চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন ফাতিমা (রা.) কেঁদে ফেললেন; এরপর নবী (সা.) পুনরায় তাঁকে ডেকে চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন হাসলেন। আমরা এই সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, নবী (সা.) যে রোগে আক্রান্ত আছেন এই রোগেই তাঁর ইন্তেকাল হবে এ কথাই তিনি গোপনে আমাকে বলেছেন। তখন আমি কাঁদলাম। আবার তিনি আমাকে চুপে চুপে বললেন, তাঁর পরিজনের মধ্যে সর্বপ্রথম আমিই তাঁর সঙ্গে মিলিত হব, তখন আমি হাসলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪৩৪)

৬. শেষ প্রার্থনা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্তে রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন—নবীজি (সা.) তাঁর বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। আর তিনিও তাঁর দিকে কান পেতে রেখেছিলেন; নবী (সা.) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কোরো, দয়া কোরো এবং আমাকে আমার বন্ধুর সঙ্গে মিলিত কোরো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১৮৭)

আপনার মতামত জানান