ডুমুর এর উপকারীতা

প্রকাশিত

Fig-ডুমুর (ইংরেজি: Ficus, Fig tree; fɪkʊs) । মোরাসিয়ে গোত্রভূক্ত ৮৫০টিরও অধিক কাঠজাতীয় গাছের প্রজাতিবিশেষ। এ প্রজাতির গাছ, গুল্ম, লতা ইত্যাদি সম্মিলিতভাবে ডুমুর গাছ বা ডুমুর নামে পরিচিত।

ডুমুর নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো জ্যাম হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্ন্যাকজাতীয় খাবারেও ডুমুরের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
শহর-নগর সর্বত্র ডুমুর পাওয়া যায় না । গ্রামগঞ্জে যেখানে-সেখানে ডুমুর গাছ দেখতে পাওয়া যায় । ডুমুরগাছ কেউ লাগায় না, আপনা আপনি হয় । তবে ডুমুর খুবই উপকারী । দুই ধরনের ডুমুর দেখা যায় – গোল ডুমুর ও যজ্ঞ ডুমুর । ডুমুরের পাতা খসখসে হয় । গোল ডুমুরের পাতা লম্বা এবং যজ্ঞ ডুমুরের পাতা গোল । ডুমুর হাটবাজারে কিনতে পাওয়া যায় না । গোল ডুমুর ডালনা ছেঁচকি খাওয়া যায় । তবে ডুমুর ফুটতে সময় লাগে । কারণ ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে নিয়ে রান্না করা হয় । ডুমুর অত্যন্ত উপকারী ফল । গ্রামদেশে বিনা পয়সায় মেলে বলে এর কদর কম । তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলে একে অবহেলা করত না কেউ ।

* ডুমুর পিত্ত ও আমাশয় রোগে উপকারী ।

* এতে লোহা বেশি আছে বলে বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে ।

* ডুমুর রক্তপিত্তা, রক্তপ্রদর, রক্তপড়া অর্থাৎ রক্তহীনতা রোগে উপকারী ।

* জ্বরের পর ডুমুর রান্না করে খেলে টনিকের কাজ করে ।

* মেয়েদের মাসিকের সময় বেশি রক্তস্রাব হলে কচি ডুমুরের রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয় ।

* দুধ ও চিনির সঙ্গে ডুমুরের রস খেলেও অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয় ।

* ডুমুরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে রক্তপিত্ত সারে ।

* আমাশয় হলে কচি ডুমুরের পাতা আতপ চালের সঙ্গে চিবিয়ে খেলে ভালো হয় । তিন দিন খেতে হয় ।

* সাদা ও রক্ত আমাশয় হলে, ডুমুরগাছের ছাল রস ২ বেলা ২ চামচ রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে ভালো হয় ।

* মাথাঘোরা রোগে, ডুমুর ভাজা করে খেলে ভালো হয় । তবে সর্বদা মনে রাখতে হবে ডুমুরের ভেতরের অংশ অখাদ্য । খেলে ক্ষতি হবে । সবসময় ডুমুরের বাইরের অংশ রান্না করে খাওয়া যায় ।

* হেঁচকি উঠা রোগে ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এক ঘন্টা, তারপর ছেঁকে নিয়ে ঐ পানি এক চামচ করে আধ ঘন্টা অন্তর খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয় ।

* ডায়াবেটিস রোগে ডুমুর গাছের মূলের রস খুবই উপকারী ।

এছাড়াও নিম্নোক্ত উপকারিতা রয়েছে-
যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে ডুমুরঃ
প্রতিদিন ডুমুর সেবন কারলে শুক্রানু বৃদ্ধি ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেবনবিধিঃ ডুমুরঃ ৩-৫ টি । সতর্কতাঃ অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক।

চর্মের বিবর্ণতা দূরীকরণেঃ
ডুমুর ছাল পানিসহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধৌত করলে চর্মের বিবর্ণতা এবং ক্ষত রোগে উপকার হয়। সেবনবিধিঃ ডুমুর ছালঃ প্রয়োজনমত । সতর্কতাঃ তেমন কোন সতর্কতার প্রয়োজন নেই ।

শ্বেতী রোগ আরোগ্যে ডুমুরঃ
শুষ্ক ছাল থেঁতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ হলে নামিয়ে সকাল- বিকাল কয়েকদিন সেবন করলে শ্বেতী রোগ আরোগ্য হয়। সেবনবিধিঃ ছালঃ ১০ গ্রাম । সতর্কতা অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক।

পরিপাক শক্তি বৃদ্ধিতে ডুমুরঃ
শুষ্ক ছাল থেঁতো করে ৪ কাপ পানিতে জ্বাল করে ১ কাপ হলে নামিয়ে ছেঁকে উক্ত নির্যাসের সাথে সমপরিমাণ পুদিনা কিংবা জৈন মিশিয়ে দিনে ২ বার সেবন করতে হবে। নিয়মিত ১মাস সেবন করতে হবে। সেবনবিধিঃ ছালঃ ৫-১০ গ্রাম। সতর্কতা অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক।

ফোঁড়া পাকাতে ডুমুরঃ
ডুমুর দুধের সাথে সিদ্ধ করে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পাকে। সেবনবিধিঃ ডুমুরঃ প্রয়োজনমত । সতর্কতাঃ তেমন কোন সতর্কতার প্রয়োজন নেই ।

ক্ষুধামন্দা রোগে ডুমুরঃ
ক্ষুধামন্দা রোগে কাঁচা ডুমুরের রস দিনে ১ বা ২ বার খাওয়ার পর সেবনে ভাল ফল পাওয়া যাবে। সেবনবিধিঃ কাঁচা ফলের রসঃ ২ চা চামচ । সতর্কতা অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক।

অপুষ্টিজনিত রোগে ডুমুরঃ
পাকা ডুমুর কেটে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর আধা কাপ দুধে সিদ্ধ করে নিয়মিত খেতে হবে। এক সপ্তাহ পর ভাল ফল পাওয়া যাবে। সেবনবিধিঃ শুকনো ফলঃ ৫ গ্রাম । সতর্কতা অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক।

ধর্মীয় গুরুত্বঃ
মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কুরআনে ‘ত্বীন’ (আঞ্জির) নামে একটি অনুচ্ছেদ বা সূরা রয়েছে। সেখানে এই ফলকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত বা অনুগ্রহরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। বাইবেলে এই ফলের উল্লেখ আছে; সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষুধার্ত যীশু একটি ডুমুর (আঞ্জির) গাছ দেখলেন কিন্তু সেখানে কোনো ফল ছিল না, তাই তিনি গাছকে অভিশাপ দিলেন। বৌদ্ধ ধর্মেও এই গাছ পবিত্র হিসেবে গণ্য। গৌতম বুদ্ধ যে বোধিবৃক্ষতলে মোক্ষ লাভ করেন তা ছিল অশ্বত্থ গাছ, যা একটা ডুমুর জাতীয় গাছ (Ficus religiosa বা Pipal)।

আপনার মতামত জানান