চাচাকে ফাঁসাতে মাকে হত্যা !

প্রকাশিত

চাচাকে ফাঁসানোর জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শরীফুল ইসলাম নামের ব্যক্তি বিলের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছেন আপন মা’কে । বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা জানান। চার সন্তানের জননী সুফিয়া বেগমের লাশ গত সোমবার উদ্ধার হয়েছিল আজগানা বিল থেকে। নিহতের স্বামী আলাল উদ্দিন, বড় ছেলে ও নিকট আত্মীয় স্বপন মিয়া মিলে হত্যা করে সুফিয়াকে । এ পরিবারের সকলে মাদক ব্যবসায়ে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ সুফিয়া হত্যায় তার স্বামী আলাল উদ্দিন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি শরীফুল ও স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিন ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের জননী সুফিয়াকে হত্যার কারণসহ বিস্তারিত জানা গেছে তাদের বর্ননায়।

পুলিশ জানায়, বড় ভাই মিনহাজের সঙ্গে আলাল উদ্দিনের বিরোধ চলছিল জমিজমা নিয়ে। সেজন্য বড় ভাইকে ফাঁসাতে আলাল উদ্দিন নিজ স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সহযোগিতা নেন নিজের বড় ছেলে শরীফুল ইসলাম ও সমন্ধি কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে স্বপন মিয়ার। তারা সকলেই মাদক ব্যবসায়ে যুক্ত। সুফিয়া বেগম নিজে মাদক পরিবহন করতেন। সম্প্রতি সুফিয়া একটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। সে টাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী ছেলে শরীফুলকে দেন ৪০ হাজার টাকা। মাকে হত্যা করলে ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে না বলে শরীফুল ধারণা করেন। আর হত্যা মামলায় চাচাকে ফাঁসাতে পারলে টাকা ও জমিজমা পাওয়া যাবে বলে তার বাবা আশ্বস্ত করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক আলাল উদ্দিন শনিবার রাতে ছেলে শরীফুলকে দিয়ে তার মাকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন। মাদক আনার জন্য সুফিয়া আজগানা বিলের কাছে পৌছালে স্বামী আলাল উদ্দিনকে দেখতে পান।

আলাল উদ্দিন স্ত্রীকে বোঝান দুইজনে একসাথে বিলে গোসল করলে অনেক রোগ বালাই ভালো হয়ে যাবে। সরল বিশ্বাসে সুফিয়া স্বামীর সঙ্গে বিলের পানিতে নামেন। সেখানে আলাল উদ্দিন ছেলে শরীফুল ও স্বপনের সহায়তায় সুফিয়ার হাত পা ধরে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন। এরপর লাশ ফেলে সকলে বাড়ি চলে যান। পরদিন সকালে আলাল উদ্দিন থানায় হাজির হয়ে স্ত্রী নিখোঁজ দাবি করে থানায় জিডি করেন। সোমবার সকালে বিল থেকে সুফিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে তারা বাড়িতে নিয়ে আসেন।

মির্জাপুর থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য সুফিয়ার মরদেহ টাঙ্গাইল মর্গে পাঠায়। সুফিয়ার ভাই মেছের আলী বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সন্দেহবশত আলাল উদ্দিনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আলাল স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে নেন। তার দেয়া তথ্যে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বড় ছেলে শরীফুলকে। গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় স্বপনকে। এরপর আলাল উদ্দিনকে বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

মির্জাপুর থানার ওসি মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বড় ভাইকে ফাঁসানোর জন্য ছেলে শরীফুল ও সমন্ধির ছেলে স্বপনকে নিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন আলাল উদ্দিন। এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানিয়েছেন। অন্য দুই আসামিকে রিমান্ডের আবেদনসহ শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে।’

আপনার মতামত জানান