ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডব

প্রকাশিত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ভোলার সাত উপজেলার কয়েক হাজার গাছ ভেঙে ও উপড়ে গেছে। বাড়ি, রাস্তা ও বিদ্যুতের খুঁটির ওপর পড়েছে অনেক গাছ। ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে প্রায় ছয় হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বেড়িবাঁধ না ভাঙলেও মনপুরা, চরফ্যাশন, চর কুকরিমুকরি ও চরপাতিলা প্লাবিত হয়েছে।

ফসলের জমি ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেড়িবাঁধ ও চর এলাকাসহ নদীতীরবর্তী এলাকায় বেশ কিছু টিনশেড ও কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, সাত উপজেলায় দুই হাজার ২৮৩টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা ও ফসলের জমির ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।

তবে কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঝড়ে ক্ষেতে থাকা আমন ধানসহ ফসলের ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতি হয়নি। জোয়ারের পানি ব্যাপকভাবে না ঢোকায় শঙ্কা কম। এখন পুরো জেলায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। ২৪ ঘণ্টায় এই পানি কমে গেলে ধানের তেমন কোনো ক্ষতিই হবে না।

এদিকে ঝড়ে গাছচাপায় তিনজন ও পানিতে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ। অন্যদিকে ঝড়ে গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে দুই দিন ধরে সাত উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। গতকাল দুপুরের পর থেকে জেলা সদরসহ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশির ভাগ এলাকায় স্বাভাবিক হয়নি।

ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা ও চরফ্যাশনের বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢালচর ও চর কুকরিমুকরি। এসব এলাকায় ঝড়ের সময় পানি চার থেকে পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু এলাকা সাত থেকে আট ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। গতকাল সকাল থেকে জোয়ারের পানি নামতে থাকে।

মনপুরা উপজেলার বাসিন্দা মো. ছালাহউদ্দিন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মনপুরা উপকূলে আঘাত হানে সিত্রাং। গতকাল রাত ৪টা পর্যন্ত এর তীব্রতায় উপজেলার সদরের হাজিরহাট বাজার, থানা, পশু হাসপাতালসহ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা মেঘনার পানিতে প্লাবিত হয়।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের পূর্ব পাশে নতুন বেড়িবাঁধের ২০ মিটার ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নের এক হাজার ৪০ মিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে মনপুরা ইউনিয়নের ৫০০ মিটার, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৪০০ মিটার ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের এক হাজার ১০০ মিটার বাঁধের ক্ষতিসহ পুরো উপজেলায় তিন হাজার ৩৪০ মিটার বাঁধের ক্ষতি হয়।

ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, প্রাথমিক তথ্যে মতে প্রায় আট হাজার ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভোলা সদর, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান ও তজুমদ্দিন উপজেলার প্রতিটি এলাকায় শত শত গাছ ভেঙে পড়েছে। রেইনট্রি, সুপারি, নারকেল ও কলাগাছ সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে চরফ্যাশনের চেয়ারম্যানবাজার সড়কে।

ভোলা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় মোট ছয় হাজার ২৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় এক হাজার ৪০০টি, দৌলতখানে ৬২০টি, বোরহানউদ্দিনে ৪৯০টি, তজুমদ্দিনে ৭৮৮টি, লালমোহনে ৯২২টি, চরফ্যাশনে এক হাজার ৩৪০টি ও মনপুরায় ৭২০টি পুকুর।

চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার চার গণ্ডা জমিতে ধান আছে। অনেক টেনশনে আছিলাম। তবে আজকে (গতকাল) পানি কম দেইখা মনে হইছে সমস্যা হইবে না। ’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, আমন ধানের ক্ষেতে পানি থাকলেও এতে তেমন ক্ষতি হবে না বলে আশা করছি। তবে পানিতে ২০০ হেক্টরের মতো জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি ত্রাণ দেওয়ায় কার্যক্রম চলছে। দুর্গতদের জন্য ৮৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আপনার মতামত জানান