গ্যাস সংযোগ বৈধ করার যৌক্তিক দাবী
বিশেষ প্রতিবেদক (ডেইলি সোনারগাঁ):
সারা দেশে প্রায় ২ লাখ অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারনে সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের বিশাল এ খনিজ সম্পদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অবৈধ সংযোগকারীরা প্রতি ১৯২ কোটি টাকা লুটপাট করে নিজেরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার এবং বার বার বিপাকে পড়ছে অবৈধ সংযোগকারীরা। তাই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন নয়, বৈধ অনুমতি দিয়ে সরকারের রাজস্বকে বেগবান করার দাবী জানিয়েছেন অবৈধ সংযোগকারী ও ভুক্তভোগীরা। এতে সরকারের রাজস্বে যোগ হবে কোটি কোটি টাকা।
জানা যায়, অজানা কারণে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এই অবৈধ লাইন স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে পারে না। বছরের পর বছর অভিযান চলে। সাময়িকভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নও হয়। আবার সে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী ভুক্তভোগীরা জানান, তারা গোয়ালের গরু, ছাগল এমনকি জায়গা জমি বিক্রি করে গ্যাস সংযোগের জন্য ৫০-৮০ হাজার টাকা তুলে দেন গ্যাস সংযোগকারী সিন্ডিকেটের হাতে। কেউ কেউ এনজিও থেকে ঋণতুলে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। বর্তমানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও তারা কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। বৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারন মানুষকে সর্বশান্ত করে তারা বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের সিন্ডিকেটের সাথে তিতাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা, এলাকার প্রভাবশালী গ্যাং, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এমনকি কিছু কিছু লোভী ও আদর্শীহীন সাংবাদিক ও জড়িত। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিবছর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে আবারো সে সংযোগ পুনঃস্থাপিত করে। এতে একদিকে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারন, অসহায়, গরীব মেহনতি মানুষ অন্যদিকে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছে গ্যাস সিন্ডিকেট।
ভুক্তভোগীরা জানান, গ্যাসের অভাবে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। তারাও অবৈধ সংযোগ বিরোধী। তাই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে সংযোগগুলো বৈধ করার দাবী জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমীপে। তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা হিসেবে সারাবিশ্বে সম্মানীত হয়ে দেশের জন্য মানবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অবৈধ সংযোগের বৈধতা দিয়ে গ্যাসের অভাবে অমানবিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে মানবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার আকুল আবেদন জানান।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার, বারদী, নোয়াগাঁও, সনমান্দী, জামপুর, সাদীপুর, কাঁচপুর, মোগরাপাড়া, পিরোজপুর, শম্ভুপুরা এবং সোনারগাঁ পৌরসভায় প্রায় ৩৫ হাজার গ্যাস সংযোগ রয়েছে। তার মধ্যে সোনারগাঁ পৌরসভা ও মোগরাপাড়ার আংশিক অংশে প্রায় ৬ হাজার বৈধ সংযোগ রয়েছে। বাকি ২৯ হাজার অবৈধ সংযোগ থেকে এককালীন গ্যাস সিন্ডিকেট প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা লুটপাট করে সাধারন মানুষকে চরম ভোগান্তীকে ফেলেছে। সরকারকে করেছে রাজস্ব বঞ্চিত। এছাড়াও সরকারকে প্রতিমাসে প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত করছে।
সূত্র জানিয়েছে,, মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে জোরালো অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে তিতাসসহ অন্যান্য কোম্পানি। তিতাসের বিতরণ ব্যবস্থায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন রয়েছে। এরমধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জে রয়েছে ১৮০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন। অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার কথা বলা হয় ওই বৈঠকে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে গ্যাসচোররা। দিনের বেলায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর রাতে আবার সংযোগ নিয়ে নেয় তারা। অধিক মুনাফার আশায় সংযোগকারীরা নিন্মমানের পাইপ লাইন ব্যবহার করছে। সংযোগগুলো বৈধতা পেলে গ্যাস চোরের দৌরাত্ম থেকে বাঁচবে সরকার ও আমজনতা। এতে বৈধ সংযোগকারীদের গ্যাস বিলও অনেক কমিয়ে আনা যাবে। বিশাল এ সংযোগের কারনে গ্যাস বিল বেড়ে বৈধ সংযোগ কারীদের নাজেহাল অবস্থা। কারন সারা বছর বৈধ ও অবৈধ পথে যে পরিমান গ্যাস খরচ হয় তার সবটুকু টাকা তুলে নেন বৈধ সংযোগকারীদের কাছ থেকে। এ দিকে সবচে বেশী গ্যাস চুরি হচ্ছে সিএনজি ষ্টেশনগুলো থেকে। তারা সরকারের ভর্তুকি দেয়া গ্যাস অবৈধ পথে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সিএনজি ষ্টেশন স্থাপনের পূর্বে এবং বর্তমানে তাদের সম্পদের হিসাব মেলালেই সব হিসেব মিলে যাবে। এসব গ্যাস চোরদের কঠিন শাস্তি এবং স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ বায়েজাপ্ত করার দাবী সাধান মানুষের।
সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী গাজী মুজিবুর রহমান জানান, সরকারের কোন অভিযানই আমলে নিচ্ছে না গ্যাস সিন্ডিকেটের হোতারা। বিশেষসুত্রে জানতে পেরেছি, গ্যাস বিচ্ছিন্ন করার পর পরই একটি টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুণঃসংযোগ স্থাপনের কথা বলে চাঁদা আদায় করছে। তাই ভুক্তভোগী সাধারন মানুষের ভোগান্তী লাগবের জন্য উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিধি, সুশীলসমাজ ও সাংবাদিক ভাইদের কাছে দাবী জানাই, আপনারা মানুষের এ দুর্ভোগের চিত্র জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা মানুষের এ ভোগান্তী লাগব করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিবেন বলে সাধারন মানুষ ও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
আপনার মতামত জানান