কী হয় মৃত্যুর সময় কালেমা পড়লে
মৃত্যুর সময় কালেমা তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে। বিশেষত কালেমার পাঠ ভুলত্রুটি মার্জনা ও পাপমুক্তিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা মৃত্যুর সময় ঈমানের সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হলো, এটি এমন একজন বিশ্বাসী বান্দার সাক্ষ্য যে কালেমার মর্মার্থ জানে, যার প্রবৃত্তি মারা গেছে, তার সংশয়পূর্ণ মন বিনম্র হয়েছে এবং যে অস্বীকার ও অবাধ্যতার পর আনুগত্য করেছে। এটা এমন ব্যক্তির ঈমানের সাক্ষ্য, যে উপেক্ষার পর গ্রহণ করে নিয়েছে এবং কঠোর অবস্থান ছেড়ে নম্রতা অবলম্বন করেছে।
দুনিয়ার লোভ-লালসাও তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে।
মৃত্যুপথযাত্রী কালেমা পাঠের মাধ্যমে তার প্রতিপালক, আসমান-জমিনের স্রষ্টা ও তার অভিভাবকের আনুগত্যের ঘোষণা দিয়েছে। বিনিময়ে সে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রত্যাশা করছে। তাওহিদের ঘোষণার মাধ্যমে সে শিরকের উপায়-উপকরণ থেকে নিজেকে মুক্ত এবং শিরককে ভ্রান্ত ঘোষণা করেছে। যেসব অহেতুক বিতর্ক তাকে ব্যস্ত করে রেখেছিল তা দূর হয়ে গেছে। এখন সে বিশ্বাসের পথে অগ্রসর হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখন বান্দা আল্লাহমুখী, সে তার মন, হৃদয় ও প্রত্যয় নিয়ে অগ্রসর হয়েছে এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহর একত্ববাদ মেনে নিয়েছে। এখন তার ভেতর ও বাইরে কোনো অমিল নেই এবং অন্তরের অন্তস্তল থেকে সে ঘোষণা দিয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
মৃত্যুর আগমুহূর্তে ব্যক্তির অন্তর থেকে দুনিয়া পুরোপুরি বিদায় নেয় এবং মহান আল্লাহর কাছে গমনের জন্য প্রস্তুত হয়। প্রবৃত্তির আগুন নির্বাপিত হয়ে অন্তরে পরকালের চিন্তা বিস্তার লাভ করে। সুতরাং তার দৃষ্টি পরকালে নিবদ্ধ থাকে এবং পার্থিব জীবন দৃষ্টির অন্তরালে চলে যায়। একনিষ্ঠ এই সাক্ষ্য হয় তার জীবনে শেষ আমল। ফলে এই সাক্ষ্য তাকে পাপমুক্ত করে এবং প্রভুর নৈকট্য দান করে। তার কারণ হলো, কালেমা পাঠকারী নিষ্ঠাপূর্ণ সত্য সাক্ষ্যসহ আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছে এবং তার প্রকাশ্যের সঙ্গে অপ্রকাশ্যের, ভেতরের সঙ্গে বাইরের কোনো অমিল নেই।
যদি সে সুস্থ স্বাভাবিক সময়ে এভাবে সাক্ষ্য দিতে পারত, তাহলে সে দুনিয়া ও দুনিয়াবাসী থেকে দূরে সরে যেত, মানুষকে ছেড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিত এবং আল্লাহকে ছাড়া কাউকে আপন ভাবতে পারত না। কিন্তু তখন সে ঈমানের সাক্ষ্য দিয়েছে পার্থিব মোহ ও প্রবৃত্তির তাড়নায় অসুস্থ হৃদয় নিয়ে এবং আল্লাহমুখী হয়েছে অন্যের প্রতি মনোযোগ নিয়ে। যদি সে মৃত্যুর আগমুহূর্তে এই সত্য সাক্ষ্য না দিয়ে অন্য সময় দিত, তাহলে তার জীবনটা অন্য জীবন হতো। পৃথিবীতে সে পশুর মতো জীবন যাপন করতে পারত না।
‘মাওয়ায়িজুল ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওঝি’ থেকে উম্মে জাওয়াদ হাবিবার ভাষান্তর
আপনার মতামত জানান