করোনার বিস্তার রোধে ইউএনও’র অক্লান্ত শ্রম

প্রকাশিত


৩০ বছরের বিধবা রোশনারা (ছদ্মনাম)তিন কন্যা সন্তানের জননী। বাস করেন সোনারগাঁ পৌরসভার একটি গ্রামে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট ছোট তিনটি কন্যা সন্তান নিয়ে তার সংসার চলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে । সরকারি নির্দেশনা মেনে তিনি এখন আর কারো বাড়িতে কাজ করতে যান না। বাড়িতেই অবস্থান করছেন। কর্মহীন হয়ে যাওয়ায় কিছুটা কষ্টে দিন কাটছিল তার। একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে বিষয়টি জেনে তাঁর নিকট সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী (১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু ও ১ লিটার তেল) পৌঁছে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম।

সবাইকে বাড়িতে থাকতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে অনুরোধ করছেন তিনি। ‘এ লড়াইয়ে রক্তপাত নেই। কিন্তু প্রাণ ঝড়বে। এ লড়াই অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে। তাই আপনারা সবাই ঘরে থাকুন। বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের হবেন না। হ্যান্ড মাইকে করোনা ভাইরাস নিয়ে বাজারে বাজারে সচেতনতার এমন বার্তা ছড়াচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। বল প্রয়োগে নয়, মানুষকে সচেতন করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন এই মানুষটি। তার পাশাপাশি কাজ করছেন সোনারগাঁ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) আল মামুন।

দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সোনারগাঁ উপজেলাটি। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকারিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে নিজ গৃহে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বাজার, দোকানপাট, গণপরিবহন। কিন্তু গ্রামের অসচেতন মানুষ সে নিয়ম সঠিকভাবে মানছেন না। সেসব মানুষকে সচেতন করে করোনার বিস্তার রোধে নিজ গৃহে অবস্থান করার নির্দেশনা নিজে মাইকে প্রচার করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ।প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার, লোক সমাগম হয় এমন স্থানে ঘুরে ঘুরে হ্যান্ড মাইক নিয়ে মানুষের মাঝে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাজার করার জন্য, ওষুধ কেনার জন্য, চিকিৎসার জন্য, দাফন বা সৎকার ছাড়া বাড়ির বাইরে কাউকে না আসতে অনুরোধ করেন। অযথা বাজারে গিয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না করতে এবং সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য মানুষকে আহ্বান জানান ইউএনও।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের লকডাউন নিশ্চিত করে তাদের ও লকডাউনে থাকা আশপাশের পরিবারের খাবার পৌছে দিচ্ছেন। এ লড়াইয়ের জন্য তৈরি করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের স্বজনরা যখন লাশ ফেলে দূরে চলে যাচ্ছেন তখন তার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করছেন তিনি।

এখানেই থেমে থাকেননি, তিনি কৃষকের একটি পাকা ধানও যেন নষ্ট না হয় সেজন্য তাদের ধান কেটে বাড়িতে পৌছে মাড়াই করারও ব্যবস্থা করছেন।

এরই মধ্যে সমাজে অসামাজিক কাযক্রম ও লকডাউন উপেক্ষা করে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছেন, ওজনে কম দিচ্ছেন, পন্যমূল্য বেশি নিচ্ছেন তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শাস্তির ব্যবস্থা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার যাতে সঠিকলোকের কাছে সঠিকভাবে পৌছায় তার জন্য রেখেছেন মনিটরিং টিম। রাতের আধাঁরে শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য পৌছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, একাত্তরে রক্ত ঝরিয়ে লড়াই করে স্বাধীনতা পেতে হয়েছে। কিন্তু এখন অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের মানুষকে এ লড়াইয়ে অংশ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

আপনার মতামত জানান