একটি কাঁচের গ্লাসের দাম মাত্র ৩৬০০ টাকা : মন্ত্রনালয়য়ে হরিলুট
ত্রাণ মন্ত্রনালয়য়ে প্রতিমন্ত্রীর দফতরে পানি খাওয়ার জন্য ১২শ’ টাকা দরে ৩৬০০ টাকায় কেনা হয়েছে তিনটি গ্লাস। তাছাড়াও ১০ পিস তোয়ালে কিনতেই খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ৮শ’ টাকা। এবং ফুল কিনেছেন ২৪ হাজার টাকার।
এমন ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে লুট করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এরই প্রেক্ষিতে জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
যুগান্তর পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু বড় বড় প্রকল্প নয়, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায়ও ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি ভর করেছে। পণ্য সরবরাহ না করেই ভুয়া বিল-ভাউচারে টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। আবার যেসব পণ্য কেনা হয়েছে তার দাম হাঁকা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি।
একদিনেই প্রতিমন্ত্রীর দফতরের জন্য ৫টি ভাউচারে ক্রোকারিজ তথা প্লেট ও কাপ-পিরিচ কেনা হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ৪শ’ টাকার। একেবারে অবিশ্বাস্য হলেও প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবের পিএস দফতরের সোফা ওয়াশ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৬২ হাজার ৫শ’ টাকা।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের আগের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বাসার দফতরের জন্য করা কেনাকাটায় অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে। যেখানে দামি টিভি, ফটোকপিয়ার মেশিনসহ মূল্যবান ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে। নিয়মানুযায়ী মন্ত্রিত্ব থেকে বিদায় নিলে এসব জিনিসপত্র ফেরত আনার কথা। কিন্তু তা আনা হয়নি।
এদিকে কেনাকাটা করতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের সেবা শাখায় যে ধরনের স্টক রেজিস্টার থাকার কথা, তা নেই। কোনোমতে একটি খাতা আছে, যেখানে শুধু পণ্যের নাম, দাম ও কার জন্য কেনা হচ্ছে এবং কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে সেটি লেখা আছে। কিন্তু রেজিস্টারের অনেক স্থানে শুধু তারিখ, স্মারক ও দাম লিখে দায়সারা হয়েছে।
এরপর সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বেশকিছু অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা হাতেনাতে প্রমাণিত হয়। প্রতিমন্ত্রীর দফতরে পানি খাওয়ার জন্য কেনা গ্লাস আনার পর সচিব দেখেন সেটি সিরামিকের। দাম হবে বড়জোর ৪শ’ টাকা। এরপর এ সংক্রান্ত ভাউচার এনে দেখা যায়, সেখানে ৩টি গ্লাস কেনার বিল করা হয়েছে ৩৬শ’ টাকা। এমন গ্লাস ও বিল ভাউচার দেখে বিস্মিত হন সিনিয়র সচিব। প্রতিমন্ত্রীর দফতরের জন্য ক্রোকারিজ কেনার ভাউচার পরীক্ষা করে বড় ধরণের অনিয়ম ধরা পড়ে। যে পরিমাণ চাহিদাপত্র তারা দিয়েছে হাত দিয়ে কেটে তার চেয়ে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
দুপুরে বৈঠকের পর বিকালে বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের দফতরে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। বিস্তারিত জানার পর প্রতিমন্ত্রী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর তিনি নির্দেশ দেন, এখন থেকে তার অনুমোদন ছাড়া কোনো কেনাকাটা করা যাবে না।
এদিকে এরকম সব অবিশ্বাস্য কেনাকাটার বিষয়ে যুগান্তর এর কাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে যারা কেনাকাটার বিল-ভাউচার করেছে তাদের ক্ষমা নেই। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না। কেউ তার দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করলে সমুচিত জবাব দেবেন।
আপনার মতামত জানান